উত্তম বড়ুয়ার সনদ বাতিল করতে আইনি নোটিশ

উত্তম কুমার বড়ুয়া
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়ার চিকিৎসক সনদ বাতিল করে এ পর্যন্ত সরকারি কোষাগার থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে আইনি নোটিশ দিয়েছেন এক আইনজীবী।

গতকাল রোববার স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব, আইনসচিব, দুদক চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিএমডিসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

নোটিশ হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। যদি না নেওয়া হয় তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পেশাগত অসদাচরণের মাধ্যমে উত্তম বড়ুয়া চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি এই পদের যোগ্য নন। তাই লাইসেন্স বাতিল করে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ টাকা তিনি কোষাগার থেকে পেয়েছেন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে যা নিয়েছেন, সব ফেরত দিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অন্যান্য দপ্তরের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও বিবাদী করা হয়।

‘উত্তমের পড়ালেখা থেকে চাকরি, সর্বত্র জালিয়াতি’ শিরোনামে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

উত্তম কুমার বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এসএসসিতে পান প্রথম বিভাগ। আর এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগ। এসএসসি আর এইচএসসি মিলে তিনি পেয়েছিলেন ১১১১ নম্বর। এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা ছিল ১২০০। ১৯৮৪-৮৫ সালে এমবিবিএসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা উত্তমের ছিল না। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে মাইগ্রেশন (বদলি) জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি এমবিবিএস কোর্সের ছাত্র হন।

চট্টগ্রামের রাউজানের আবুরখিল অমিতাভ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) প্রথম বিভাগে পাস করেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬২৮। এরপর ১৯৮৩ সালে কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মোহাম্মদ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) মানোন্নয়ন পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৪৮৩।

এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হলে উত্তম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের মনির আহমেদ নামের এক কেরানির মাধ্যমে জালিয়াতি করেন।

মাইগ্রেশন তালিকায় অধ্যক্ষের স্বাক্ষরের ওপরের খালি জায়গায় উত্তম কুমার বড়ুয়ার নামটি টাইপ করে দেওয়া হয়। পরে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে তিনি ভর্তি হন।

উত্তম কুমার বড়ুয়ার বিরুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনায় প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি কেনায় ব্যাপক অনিয়মের কারণে গত বছরের মার্চ মাসে উত্তম কুমার বড়ুয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।