জামালপুর-৫ (সদর) আসনে এবার লক্ষাধিক নতুন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন নিয়ে তরুণ ভোটাররা উদ্বিগ্ন। এই নির্বাচন নিয়ে তাঁরা যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি তাঁদের মধ্যে শঙ্কাও কাজ করছে।
এই আসনে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৮ জন ভোটার। এর মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার ৪৪১ জন নারী এবং ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৭ জন পুরুষ ভোটার রয়েছে। তবে এবারই প্রথম ভোট দেবেন ৯২ হাজার ৭২৯ জন ভোটার। এই আসনের ১৫০টি ভোটকেন্দ্রের ৮৬৮টি কক্ষে ওই সব ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অন্তত ২২ জন তরুণের একটি আড্ডায় যোগ দিয়ে তাঁদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। এ সময় তাঁরা বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে চান তাঁরা। তবে সেই পরিবেশ থাকা নিয়ে তাঁদের মনে শঙ্কা রয়েছে। প্রথম দিকে তাঁদের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বাস ছিল, কিন্তু সময় যত ঘনিয়ে আসছে, কেমন জানি নির্বাচনী হাওয়া উদ্বেগের দিকে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় হামলা ও নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র ভাঙচুরের ঘটনার কথাও শোনান তাঁরা। গভীর রাত পর্যন্ত হাটবাজার ও চায়ের দোকানে নির্বাচনী হাওয়া বয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কয়েক দিন ধরে রাত নয়টার পর থেকে পুরো শহর কেমন জানি সুনসান হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তাঁরা। তাই নির্বাচনে উচ্ছ্বাসের পরিবর্তে আতঙ্কের কালো ছায়া নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে। এতে তাঁদের মধ্যেও ভোটের দিনটি নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। তাঁরা উদ্বেগ, শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে ভোট দিতে চান না।
সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহার এবারই প্রথম ভোট দেবেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে গত নির্বাচনের খবর শুনেছি। গত নির্বাচনে আমার মা ভোট দিতে পারেননি। তিনি কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন, তাঁর ভোটটি আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু এবার আমরা সেই নির্বাচন দেখতে চাই না। তবে এই নির্বাচন নিয়ে বাসাসহ সব জায়গায় একটিই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, শান্তিপূর্ণভাবে কেন্দ্রে গিয়ে আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব কি না? এতেই প্রমাণ হয়, বেশির ভাগ ভোটার শঙ্কায় আছেন। সব পক্ষকে বলতে চাই, জনগণের কথা চিন্তা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিন।’
মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে যিনি অবদান রাখবেন, এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দিতে চান পশ্চিম নয়াপাড়া এলাকার নতুন ভোটার তাহমিদ আহমেদ।
বাগেরহাট এলাকার বাসিন্দা ও সরকারি জাহেদা শফির মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী বাবলী আক্তারও এবার নতুন ভোটার। তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে অশান্ত পরিবেশ থাকলে একজন নারী হিসেবে পরিবারের অভিভাবকদের কোনো সময়ই ভোট দিতে উৎসাহ দেওয়ার কথা নয়।
এতে অনেক নারী ভোটার ভোটকেন্দ্রে না–ও যেতে পারেন।’ কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়, নিজের বিবেক-বিবেচনায় যাঁকে যোগ্য মনে হবে এবং যিনি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়বেন, তাঁকেই ভোট দিতে চান শহরের আমলাপাড়া এলাকার নতুন ভোটার উম্মে তৌফা শিশির। তবে তিনিও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা জানান।
শহরের কলাবাগান এলাকার নতুন ভোটার এস এম মাসুদ রানা ভোটের দিনটিকে একটি উৎসব হিসেবে দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য উভয় পক্ষকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের মতো তরুণদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তা না হলে এক সময় গণতন্ত্র বলতে আর কিছুই থাকবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ভোটের দিনটি নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে।’ সব আতঙ্ক দূর করতে ইসিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার দাবিও জানান তিনি।