যাত্রীকল্যাণ সমিতি

ঈদে ঘরে ফিরতে গিয়ে ১৩ দিনে দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৫

এবার ঈদে ঘরে ফিরতে গিয়ে নৌ, রেল ও সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ১৩ দিনে নিহত হয়েছে ৪০৫ জন। এ ছাড়া নৌ দুর্ঘটনায় এখনো ২৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। এককভাবে সব থেকে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। নিহত মানুষের সংখ্যা ৩৩৯ জন। আর আহত হয়েছে ২ হাজার ৮৫৯ জন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশি মানুষ বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সরকারকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। সড়কের অব্যবস্থাপনা রোধ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির ‘ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০১৮’ তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিচ্ছি যে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, সড়কের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন কি না, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আত্মহত্যা করার মতো শয়ে শয়ে মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। আমরা বেপরোয়া জাতিতে পরিণত হয়েছি। যা কিছু হয়, তা বন্দুকযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা চলছে। জনগণও তালি দিচ্ছে। কিন্তু সংকটের সমাধান হচ্ছে না। আইনের শাসন সর্বক্ষেত্রে নিশ্চিত করা দরকার।’

গত ২৫ জুন মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরপাল্লার যানে বিকল্প চালক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্য সব নির্দেশের মধ্যে রয়েছে, পরিবহনের চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, রাস্তার মাঝে চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা, সিগন্যাল দিয়ে পারাপার করা, সিট বেল্ট পরানো নিশ্চিত করা। এসব বিষয় তদারকির জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

এর আগে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী লিখিত প্রতিবেদন পড়েন। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরে ঘরে ফেরাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। গত তিন বছরে ঈদুল ফিতরে ৬০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৮০৩ জন। তিনি আরও বলেন, ঈদ যাত্রা শুরুর দিন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতে ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছে। একই সময় নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়েছে। এবার ঈদে বাড়ি ফিরতে ও কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে মোট ৪০৫ জন মানুষ মারা গেছে।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০০৬ সালে ঈদুল ফিতরের সময় নৌ, রেল ও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ২০০ জন। আর গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ৩০১ জন। আর এবার ৪০৫ জন।

এবার বেশি সংখ্যায় মানুষ নিহত হওয়ার কারণ সম্পর্কে মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, এবার ঈদে পরিবহনে বেপরোয়া চাঁদাবাজি হয়েছে। ফলে মানুষ বিশেষত দরিদ্র মানুষ বাস ও নৌপথে বেশি টাকা দিয়ে যেতে পারেননি। তাঁরা ট্রাকে করে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। এতে অবশ্যই সরকারের দায় আছে।

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কোনো দৈবদুর্বিপাকের বিষয় নয়। এটি মানুষের সৃষ্ট। এটি প্রতিরোধের দায়িত্ব ছিল সরকারের। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি বলেন, দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো, পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনা। এসবের সঙ্গে সরকারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের সম্পর্ক রয়েছে। নিহত মানুষগুলোকে শুধু সংখ্যায় বিচার করা যাবে না। বেঁচে থাকতে তাঁরা প্রত্যেকে মানুষ ছিলেন। এগুলো জীবন্ত মানুষের পরিসংখ্যান। রাষ্ট্রকে এই হত্যার দায় নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আইবুর রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা মহামারি আকারে ধারণ করেছে। এর প্রধান কারণ আইন না মানার প্রবণতা বাড়ছে সবার মধ্যে। দেশে ২১৪টি ব্ল্যাক স্পট (সড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা) রয়েছে। নির্মাণ ত্রুটির কারণে সড়কের এসব ব্ল্যাক স্পটে দুর্ঘটনা ঘটছে। এটি বুয়েট গবেষণা করে এটি বের করেছে।