সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর মানুষের আস্থার অভাব আছে। আমার নিজেরও অভাব আছে। তাদের যা কার্যকলাপ তাতে আস্থা বাড়ার কোনো কারণ হয়নি।’
আজ রাজধানীতে নির্বাচন কমিশনের ওপর তাঁর আস্থা কতটুকু—এমন প্রশ্নের জবাবে কথাগুলো বলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮, কোন দলের ইশতেহার কেমন?’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যম থেকে আমরা যতটুকু খবর পাচ্ছি, অবশ্যই নৈরাশ্যজনক, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। হামলা-মামলা হচ্ছে। একদল আরেক দলকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এটা তো আমরা সবাই জানি।’ তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি বিরাজমান তাতে দেশের জন্য যা দরকার, আমরাও তা চাই, সেটা হলো গণতন্ত্র ও সুশাসন। এটা করতে হলে শুরুতেই একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।
এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমার মত হলো, আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহারগুলো করেছে বিগত নির্বাচনগুলোতে, তারা তা বাস্তবায়ন করেনি। আমরা আশা করব, নির্বাচনের পর তারা ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে। গত নির্বাচনকে তো নির্বাচন বলা যায় না। আমরা আশা করছি, নির্বাচনের দিন ভোটারের উপস্থিতি হবে এবং নির্বাচনের পর দলগুলো তাদের ইশতেহার ভুলে যাবে না।’ নির্বাচনে সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রশাসন চেষ্টা করছে। আর্মিও থাকবে মাঠে। আমরা আশা করতে পারি, সহিংসতা হয়তো কমে যাবে বা হবে না।’
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানুষের ভোটাধিকার। ২০১৪ সালে একতরফা একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। প্রতি নির্বাচনে ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থী বেছে নেবে, তারাই সরকার গঠন করবে। এটা যদি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে এটাই আমাদের দরকার সব দলের কাছ থেকে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ভালো ভালো কথা, কথার ফুলঝুড়ি, চটকদার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পরে তারা ক্ষমতায় গেলে আর সেই ইশতেহারের কথা মনে রাখে না। নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকারগুলো পরবর্তীতে বাস্তবায়ন না হলে এগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘একে অপরের জীবন রক্ষা, জানমাল রক্ষার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আজকে আমরা একে অপরকে নিশ্চিহ্নের রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছি। আমাদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য, রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরি করা জরুরি। নির্বাচনের পর একটা দল ক্ষমতায় আসবে। বাকিদের কী হবে? তাদের কি আমরা বঙ্গোপসাগরে ফেলে আসতে পারব? আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান, বিভক্তি বৈরিতার সম্পর্কের অবসান করতে হবে।’
এর আগে সুজনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার নিয়ে এক পর্যালোচনা তুলে ধরেন সুজনের সহযোগী সমন্বয়কারী নাসির আমিন। পর্যালোচনায় বলা হয়, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৃশ্যত অনেক বৈরিতা ও মতপার্থক্য থাকলেও ইশতেহারে বেশ মতৈক্য দেখি। বিশেষ করে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ দমন, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করা এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সব দলই অস্বীকার করেছে।’
পর্যালোচনায় বলা হয়, তরুণ ভোটারদের মন জয় করতে সব দলকেই যত্নবান হতে দেখা গেছে। তবে বাম রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা জোটগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে তেমন কোনো উল্লেখ দেখা যায় না।
ইশতেহারের পর্যালোচনায় উঠে আসে, প্রধান রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে যে সমালোচনা কিছুটা গৎবাঁধা প্রবণতারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। দেশের উন্নয়নে পক্ষ–বিপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনমূলক সমালোচনা এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের ভালো কাজের মূল্যায়ন এবারের ইশতেহারেও দেখা যায়নি। এই ক্ষেত্রে রাজনীতির মেরুকরণের লক্ষণও জোরালো।