মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার লক্ষ্যে টানা ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় মাছ শিকার, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ কারণে জেলেরা এখন ইলিশ ধরা বন্ধ রেখেছেন। আর মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অনেকে একে ‘সরকারি ছুটি’ বলে থাকেন। এ সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলে-পরিবারের জন্য ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) নদীতে ইলিশ ধরায় নিষিদ্ধ সময় শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় দেশের অন্যান্য নদী এলাকার মতো মেঘনা নদী উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকায় মাছ ধরা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে এই অঞ্চলে কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট, মতিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলো নিরাপদ এলাকায় ভিড়িয়ে রেখেছেন। জেলেদের কেউ কেউ মাছ ধরার জাল বোনার কাজ শুরু করছেন। কেউ জোড়াতালি বুনে ঠিক করছেন। আবার কেউ কেউ নৌকা ও ট্রলার মেরামত করছেন। তবে দীর্ঘ এই ছুটিতে কী কাজ করবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত জেলেরা।
আতিক উল্লাহ নামের এক জেলে বলেন, ‘নিষিদ্ধ সময়ে আড়তদারদের কাছ থেকে দাদনের টাকা নিয়েই আমার সংসার চলে। ২০ কেজি করে চাল দিয়ে কোনো সংসার ঠিকমতো চলতে পারে না। সরকার জেলেদের জন্য বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।’
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আশ্বিনী পূর্ণিমায় মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যে কারণে চলতি বছরের ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকায় মাছ ধরা যাবে না। একই সঙ্গে মাছ শিকার, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ। এ আইন অমান্য করলে জেল-জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নদী, মাছঘাট, বাজার ও জনবহুল স্থানে সভা-সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার-পোস্টারিং ও মাইকিং করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে মৎস্য অধিদপ্তর, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।
২২ দিনের জন্য প্রতিটি জেলে-পরিবারকে ২০ কেজি করে লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৭৩৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে। জেলা সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতির নিবন্ধিত ৩৭ হাজার ৩২৬ জেলে-পরিবার এসব চাল পাবে।