এবার অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের পৃথক দুটি মামলায় সাংসদ হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে ৭ দিন করে ১৪ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে চকবাজার থানা-পুলিশ। এ ছাড়া একই অভিযোগে করা আরও দুই মামলায় ইরফানের দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লাকেও ৭ দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার চকবাজার থানা-পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার এ আবেদন করে।
আগামী রোববার রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে চকবাজার থানায় দুজনের নামে দুটি করে মামলা হয়। এসব মামলায় দুজনকে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে মারধরের মামলায় বর্তমানে ইরফান ও তাঁর দেহরক্ষী জাহিদ মোল্লা গতকাল বুধবার থেকে তিন দিনের রিমান্ডে আছেন।
গতকাল তাঁদের ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আজ বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর হলে মামলার নথিপত্রসহ ইরফান, জাহিদ মোল্লা ও আগের দিন রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া এ বি সিদ্দিক ওরফে দীপুকে ডিবিতে সোপর্দ করা হয়েছে। মারধরের মামলার আরেক আসামি ইরফানের গাড়িচালক মিজানুর রহমান এখন কারাগারে আছেন।
নৌ কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির রমনা বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিজুল হক আজ প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডে প্রথম দিনে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর করাসহ তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা আরও দুই দিন রিমান্ডে আছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সব প্রশ্নের জবাব মিলবে বলে আশা করছেন ডিবির এই কর্মকর্তা।
২৫ অক্টোবর রাতে ধানমন্ডিতে কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সাংসদ হাজি সেলিমের স্টিকারযুক্ত গাড়ি নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহম্মেদ খানের মোটরসাইকেলকে ধাক্কায় দেয়। এ সময় নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা গাড়ি থামাতে গেলে ওই গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় পরের দিন ধানমন্ডি থানায় ইরফান ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই নৌ কর্মকর্তা।
চকবাজার থানায় করা চার মামলার এজাহার
চকবাজারের দেবীদাস ঘাট লেনের ২৬ নম্বর বাসা ‘চান সরদার দাদাবাড়ি’তে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ কয়েকজন ব্যক্তি অবস্থান করছেন, এমন খবর পেয়ে ২৬ অক্টোবর র্যাব-৩–এর একটি দল সেখানে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুজন দৌড়ে ভবনের ওপরের দিকে উঠে যান। তখন তাঁরা ভবনটিকে ঘিরে ফেলেন। পরে চার সাক্ষীর উপস্থিতিতে র্যাব তল্লাশি চালায়। ভবনের চারতলায় দরজার ডান দিকে পশ্চিম দিকের ঘরে মো. জাহিদুল মোল্লাকে পান তাঁরা।
এজাহারে র্যাব লিখেছে, জাহিদুল মোল্লার দেহ তল্লাশির সময় কালো রংয়ের বিদেশি পিস্তল এবং সাদা রঙের জিপারযুক্ত স্বচ্ছ এয়ারটাইট পলিপ্যাক থেকে ২০৩টি করে ৪০৬টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার হয়। আর দুই পকেট থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি ‘টাচ মোবাইল’। ওই ভবনের চারতলার অন্য পাশে পাওয়া যায় মো. ইরফান সেলিমকে (৩৭)। তাঁর ব্যক্তিগত বিছানার তোশকের ডান পাশের নিচ থেকে পাওয়া যায় পিস্তল। জাহিদুল মোল্লা ও ইরফান সেলিম—দুজনের পিস্তল একই ব্র্যান্ডের।
জব্দ তালিকায় এয়ারগান, কালো রঙের দুটি ছোরা, চায়নিজ কুড়াল, ৩৮টি কালো রঙের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ব্যাটারি এবং চার্জারসহ ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফসহ ব্রিফকেস, একটি ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন, বিয়ার ও মদের কথা উল্লেখ রয়েছে। র্যাব লিখেছে, অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও মাদক বিষয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসা করলে সন্তোষজনক জবাব কিংবা কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
২৫ অক্টোবর রাতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে মারধরের জেরে পরদিন সোমবার পুরান ঢাকার বড় কাটরায় ইরফানের বাবা সরকারদলীয় সাংসদ হাজি সেলিমের বাড়িতে দিনভর অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক রাখার দায়ে ইরফান সেলিমকে এক বছর কারাদণ্ড দেন। অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার কারণে দিয়েছেন ছয় মাসের কারাদণ্ড। ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদকে ওয়াকিটকি বহন করার দায়ে ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়।