ইভিএমে ভোট কম পড়েছে ১৫%

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজের ব্যালটে অনিয়ম করার সুযোগ বেশি।

বাংলাদেশে নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন

চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে কাগজের ব্যালটের চেয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে প্রায় ১৫ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। দ্বিতীয় ধাপের পৌর ভোটে এই ব্যবধান ছিল ১১ শতাংশ।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু থেকে বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনে ব্যালট ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট পড়ার হারে তারতম্য দেখা যাচ্ছে। তবে ইভিএমে কেন ভোট কম পড়ে (কাস্ট), তার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন সময় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, প্রযুক্তিভীতি, করোনাকাল, নেতিবাচক প্রচারণা ও জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ না থাকার কারণে ইভিএমে ভোটের হার কম।

এবার পাঁচ ধাপে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপের পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে ৫২টি পৌরসভায় মেয়র পদে ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ভোট হয় ইভিএমে। আর ২৪টিতে ভোট নেওয়া হয় কাগজের ব্যালটে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে পাওয়া ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মেয়র পদে ব্যালটে ভোট পড়েছে ৭৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বিপরীতে যে ২৮টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়েছে, সেখানে ভোট পড়ার হার ৬০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

চতুর্থ ধাপে ব্যালটে অনুষ্ঠিত ২৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৭টিতে ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। কোনো পৌরসভায়ই ৬০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েনি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভায় ৯২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

অন্যদিকে এ ধাপে ইভিএমে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ৮০ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২৮টি পৌরসভার মধ্যে মাত্র দুটি পৌরসভায় ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। আর ৬০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে ১২টি পৌরসভায়।

নির্বাচন কমিশন

এর আগে দ্বিতীয় ধাপের ভোটেও ব্যালটের সঙ্গে ইভিএমে ভোটের ফারাক ছিল প্রায় ১১ শতাংশ। ওই ধাপে কাগজের ব্যালটে ভোট পড়ার হার ছিল ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর ইভিএমে ভোট পড়ে ৫৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভার সব কটিতে ভোট হয়েছিল ইভিএমে। ওই নির্বাচনে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। তৃতীয় ধাপে সব পৌরসভায় ভোট নেওয়া হয়েছিল ব্যালটে।

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও পৌরসভা নির্বাচনের সব কটি ধাপের ফলাফল পর্যালোচনা করেছেন। ইভিএমে ভোট পড়ার হার কম কেন, তা নিয়ে একটি গবেষণা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

২০১২ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম ইভিএমে ভোট হয়েছিল। বর্তমান কমিশনের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুটিসহ মোট ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়। এর আগে–পরে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে শুরু থেকেই বিএনপি ইভিএমে ভোট নেওয়ার বিরোধিতা করে আসছে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে ইভিএমে যে ছয়টি আসনে ভোট হয়েছিল, সেখানে ভোটের হার ছিল গড়ে ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ। এরপর বিভিন্ন উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও কাগজের ব্যালটের সঙ্গে ইভিএমে ভোটের হারের ব্যবধান দেখা গেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কাগজের ব্যালটে অনিয়ম করার সুযোগ বেশি। কিছু কলাকৌশল করে ইভিএমের ভোটেও অনিয়ম হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠছে। তবে ইভিএমে অনিয়মের সুযোগ কম। এ কারণে ভোটের হারে এই তারতম্য হয়ে থাকতে পারে। ইভিএমে ভোট পড়ার হার কম কেন, তা নিরীক্ষা করে ইসির বের করা উচিত।