সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নিজামুল হক বলেছেন, সারা পৃথিবীতেই ইনডিজেনাস মানুষের বিশেষ অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের বিষয়টিকে অস্বীকার করা যাবে না। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটি করা না গেলে ন্যায় বিচার হবে না।
গতকাল শুক্রবার সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে দিনব্যাপী আয়োজিত ‘তিন পার্বত্য জেলায় দেওয়ানি বিচারব্যবস্থায় বিদ্যমান অসংগতি ও অস্পষ্টতা এবং সেগুলো নিরসনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি মো. নিজামুল হক এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহযোগিতায় রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতি এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ওয়াগ্গাছড়া টি স্টেট লিমিটেড বনাম আবু তাহের ব্রাদার্স মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের উদাহরণ টেনে বিচারপতি মো. নিজামুল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবনযাপন ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আইন এখানে প্রযোজ্য হবে। তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হলে সমস্যা রয়ে যাবে। পার্বত্য এলাকার ভূমির সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সামাজিক ও ভূমিব্যবস্থায় বিশেষ আইন রয়েছে। সে আইনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া বিচারব্যবস্থার অসংগতি দূর করা যাবে না। পার্বত্য অঞ্চলে ‘অপারেশন উত্তরণ’ সেনাশাসন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাশাসন বলবৎ থাকলে বিচারব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়।
চাকমা সার্কেল-প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ও পার্বত্য চুক্তির মূলধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইন পরিবর্তন করতে হবে। শাসনবিধির কিছু মন্দ দিক আছে। সেগুলো দূর করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে। পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদের পূর্বানুমোদন ছাড়া ভূমি হস্তান্তরের কাজগুলো সম্পাদন না করতে বিচারক ও আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাঙামাটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা। বক্তব্য দেন রাঙামাটির জেলা ও দায়রা জজ মো. কাউসার, বান্দরবান জেলা ও দায়রা জজ মো. শফিউর রহমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মালিক আবদুল্লাহ আল আমিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ওয়াসিউর রহমান, ব্লাস্টের আইন সমন্বয়কারী মো. ইদ্রিসুর রহমান, বান্দরবান আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, রাঙামাটি আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মোখতার আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন রাঙামাটি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোষণ চাকমা। সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি জেলা আইজীবী সমিতির সভাপতি প্রতীম রায়। সেমিনারে তিন পার্বত্য জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, আইনজীবী, মনবাধিকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।