ইউএনও ওয়াহিদার অস্ত্রোপচার শেষ, শারীরিক উন্নতি বলার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি

ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রথম আলো

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার শেষ হয়েছে। তাঁর শরীরের ডানপাশ পুরোপুরি অবশ হয়ে গেছে। ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থার উন্নতি কতটা—সেটা বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

বৃহস্পতিবার রাতে আড়াই ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচার শেষে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলম প্রথম আলোকে এ কথা বলেন।

অস্ত্রোপচারে অংশ নেন ছয়জন সার্জন, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন একজন অবেদনবিদ। অস্ত্রোপচার শুরু হয় রাত ৯টার দিকে। এক প্রশ্নের জবাবে বদরুল আলম বলেন, ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থার উন্নতি কতটা সে সম্পর্কে এখনই বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে অন্য যেসব লক্ষণ দেখে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলা হয়, সে লক্ষণগুলো কিছুটা ভালোর দিকে। তাঁর শরীরের রক্তচাপ, অক্সিজেনের স্তর এখন ভালো আছে।

ওয়াহিদা কোনো কথা বলেছেন কি না জানতে চাইলে বদরুল আলম বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর তিনি সাড়া দিয়েছেন। তবে তিনি কোথায় আছেন, কীভাবে এলেন— তা এখনো বুঝতে পারছেন না।

বুধবার দিবাগত রাতের কোনো একসময়ে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে ঢুকে ইউএনও ও তাঁর বাবার ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তাঁকে রংপুরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জরুরি ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে আনা হয়। তাঁর বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ মাহমুদ বলেন, বুধবার রাতের কোনো এক সময়ে হামলা হয়েছে। ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে দুর্বৃত্তরা তাঁর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে। এর আগে দুর্বৃত্তরা ওই বাসভবনের নিরাপত্তা প্রহরীকে বেঁধে প্রহরী কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখে। ইউএনওর বাবা ওমর আলী (৬০) প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তিনি হাঁটতে বের না হওয়ায় সঙ্গীরা তাঁর খোঁজ নেওয়ার জন্য বাসভবনে যান। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে ইউএনও, তাঁর বাবা ও প্রহরীকে উদ্ধার করে।

সকালে দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক, জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম ও পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সাংসদ বলেন, ‘এটি কোনো ডাকাতির ঘটনা নয়। কারণ ঘরের কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। তাঁকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমার ধারণা।’ তিনি বলেন, এই উপজেলায় বড় কোনো শিল্পকারখানা নেই। অধিকাংশই কৃষক। স্থানীয়ভাবে তাঁর শত্রু থাকার কথা না।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দুই তরুণ

ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলাকারী দুজন তরুণ। তাঁরা গড়নে হালকা স্বাস্থ্যের। এ কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন ওয়াহিদা খানমকে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

হামলাকারীদের চিহ্নিত করা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত কারণ জানা যায়নি। তদন্ত চলছে, কারণ বের করার চেষ্টা চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে হালকা স্বাস্থ্যের দুজন তরুণ। তবে তাদের চেহারা পুরো বোঝা যাচ্ছে না। হাতুড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করেছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন তিনি আশাবাদী, খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারবেন।