একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে কাল রোববার সকাল আটটা থেকে। এ নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে হলেও ২২৭টি আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরাসরি পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি আসনে দুই দলের প্রার্থীই শক্তশালী অবস্থানে আছেন।
কোনো আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ সরাসরি বিএনপি কিংবা বিএনপির প্রতিপক্ষ সরাসরি আওয়ামী লীগ হলে সেই আসনের নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই তপ্ত থাকবে। এবারের নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়। জাঁদরেল প্রার্থীদের আসনগুলো আরও তপ্ত।
আদালতের নির্দেশে প্রার্থী যোগ-বিয়োগ শেষে ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২৯৯ আসনের চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর যে তালিকা করেছে, তাতে দেখা যায়—মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ লড়ছে ২৬০টি আসনে। দলটি শরিকদের সঙ্গে নৌকা নিয়ে লড়ছে ২৭২টি আসনে। বাকি আসনে শরিকেরা নিজেদের প্রতীক নিয়ে লড়ছে। মহাজোটের অংশ হলেও জাতীয় পার্টি লড়ছে ১৭৫টি আসনে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট লড়ছে ২৮৪টি আসনে। ১৬টি আসনে তাদের কোনো প্রার্থী নেই। তবে শেষ মুহূর্তে এসে তারা এসব আসনের কয়েকটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে। এই জোটের বিএনপি লড়ছে ২৫৮টি আসনে। তবে এই তালিকায় অনিবন্ধিত জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক ঐক্যের প্রার্থীরাও আছেন। দলটি শরিকদের সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছে ২৮৩টি আসনে। এই জোটের এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ চট্টগ্রাম-১৪ আসনে লড়ছেন নিজস্ব ছাতা প্রতীক নিয়ে।
মুখোমুখি আ. লীগ-বিএনপি
এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে তথ্য, তাতে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে নোয়াখালী-৫। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপির প্রার্থী মওদুদ আহমদ। এই আসনে দুই প্রার্থীই কয়েকবার করে জিতেছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দুই প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে অবিরাম অভিযোগ করে যাচ্ছেন।
একই রকম উত্তাপ ছড়াচ্ছে আরও কয়েকটি আসন। এর একটি আসন হলো ঠাকুরগাঁও-১। এই আসনে লড়ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন।
কুমিল্লা-১ আসনে লড়ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ সুবিদ আলী ভুঁইয়া। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ও মনিরুল হক চৌধুরী লড়ছেন কুমিল্লা-১০ আসনে। চট্টগ্রাম-১০ আসনে আছেন বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমিন। চট্টগ্রাম-১১ লড়ছেন বিএনপির আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের এম এ লতিফ।
দুই দলের প্রার্থীর কারণে আরও কিছু আসনের দিকে সাধারণ মানুষের উৎসুক দৃষ্টি থাকবে। এসব প্রার্থীদের মধ্যে আছেন—আওয়ামী লীগের ইসরাফিল আলম ও বিএনপির আলমগীর কবির (নওগাঁ-৬), আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী ও বিএনপির আমিনুল হক (রাজশাহী-১), বিএনপির আবু হেনা ও আওয়ামী লীগের এনামুল হক (রাজশাহী-৪), বিএনপির রুমানা মাহমুদ (বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদের স্ত্রী) ও আওয়ামী লীগের হাবিবে মিল্লাত (সিরাজগঞ্জ-২), আওয়ামী লীগের ফরহাদ হোসেন ও বিএনপির মাসুদ অরুণ (মেহেরপুর-১), বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দীন (যশোর-১), বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার (মাগুড়া-২), বিএনপির মিয়া গোলাম পারওয়ার (জামায়াত নেতা) ও আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), বিএনপির হাফিজ উদ্দীন আহমেদ ও আওয়ামী লীগের নুরুন্নবী চৌধুরী (ভোলা-৩), আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), আওয়ামী লীগের বিএইচ হারুন ও বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমর (ঝালকাঠি-১), আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন ও বিএনপির তাহমিনা জামান (নেত্রকোনা-৪), বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ও আওয়ামী লীগের ফজলে নূর তাপস (ঢাকা-১০), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও বিএনপির চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী (গাজীপুর-১) এবং আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি ও বিএনপির ফজলুল হক মিলন (গাজীপুর-৫)।
বাকি যেসব আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সরাসরি মুখোমুখি অবস্থানে আছে, সেগুলো হলো—পঞ্চগড়-১ ও ২, ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-১,২, ৪,৫ ও ৬, নীলফামারী-১ ও ২, লালমনিরহাট-১ ও ২, রংপুর-২,৪, ৫, ও ৬, কুড়িগ্রাম-১,৩, ও ৪, গাইবান্ধা-২,৫, জয়পুরহাট-২, বগুড়া-১ ও ৫, চাপাইনবাবগঞ্জ-১,২ ও ৩, নওগাঁ-১,২, ৩,৪ ও ৫, রাজশাহী-৩ ও ৫, নাটোর-১,২ ও ৩, সিরাজগঞ্জ-১,৩, ৪,৫ ও ৬, পাবনা-২,৩, ৪ ও ৫, মেহেরপুর-২, কুষ্টিয়া-১,৩ ও ৪, চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২, ঝিনাইদহ-১,৩ ও ৪, যশোর-২,৩, ৪,৫ ও ৬, মাগুড়া-১, নড়াইল-১ ও ২, বাগেরহাট-১,২, ৩ ও ৪, খুলনা-১,২, ৩,৪, ও ৬, সাতক্ষীরা-২,৩ ও ৪, বরগুনা-১ ও ২, পটুয়াখালী-১,২, ৩ ও ৪, ভোলা-১,২, ও ৪, বরিশাল-২,৪ ও ৫, ঝালকাঠি-২, পিরোজপুর-১, টাঙ্গাইল-১,২, ৩,৫, ৬ ও ৭, জামালপুর-২,৩ ও ৫, শেরপুর-১,২ ও ৩, ময়মনসিংহ-১,২, ৩,৫, ৬,৭, ৯ ও ১১, নেত্রকোনা-১,২, ৩, ও ৫, কিশোরগঞ্জ-১,২, ৪,৫ ও ৬, মানিকগঞ্জ-১ ও ২, মুন্সিগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-২,৩, ৫,৯, ১১,১২, ১৩,১৪, ১৫,১৬ ও ১৯, গাজীপুর-১,২, ৪ ও ৫, নরসিংদী-১,২, ৪ ও ৫, নারায়ণগঞ্জ-১,২, রাজবাড়ী-১ ও ২, ফরিদপুর-১,২, ৩ ও ৪, গোপালগঞ্জ-১,২ ও ৩, মাদারীপুর-১,২ ও ৩, শরিয়তপুর-১,২ ও ৩, সুনামগঞ্জ-১,২ ও ৫, সিলেট-১,৩, ৪ ও ৬, মৌলভীবাজার-১,৩ ও ৪, হবিগঞ্জ-৩, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-১,৩, ৫ ও ৬, কুমিল্লা-২,৩, ৫,৬, ৮,৯, ১১, চাঁদপুর-১,২, ৩,৪ ও ৫, ফেনী-২, নোয়াখালী-১,২, ৩,৪ ও ৬, লক্ষ্মীপুর-৩, চট্টগ্রাম-১,৩, ৪,৬, ৮,৯, ১২,১৩, ১৫ ও ১৬, কক্সবাজার-২,৩ ও ৪, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান।
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নেই
আইনি জটিলতার কারণে এবারের নির্বাচনে ১৬টি আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নেই। আসনগুলো হলো—দিনাজপুর-৩, নীলফামারী-৪, গাইবান্ধা-৪, জয়পুরহাট-১, বগুড়া-৭, রাজশাহী-৬, নাটোর-৪, ঝিনাইদহ-২, জামালপুর-১ ও ৪, মানিকগঞ্জ-৩, ঢাকা-১ ও ২০, নরসিংদী-৩, সিলেট-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪।
মার্কা আছে দল নেই
দুটি আসনে সরাসরি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। তবে দল দুটির মার্কা আছে। মৌলভীবাজার-২ আসনে বিকল্পধারা এম এম শাহীন নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একই আসনে গণফোরামের সুলতান মো. মনসুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ধানের শীষ নিয়ে। লক্ষ্মীপুর-৪ জেএসডি আ স ম রব লড়ছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। আর বিকল্পধারা আবদুল মান্নান নৌকা নিয়ে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সুলতান মো. মনসুর ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, লড়েছিলেন নৌকা প্রতীকে। আর এম এম শাহীন ছিলেন স্বতন্ত্র। জিতেছিলেন শাহীন। সংসদ গিয়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন।