রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য দলের প্রার্থী এবং যাঁরা দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি, তাঁরা গতকাল শনিবার সব বিভেদ ভুলে কাজ করার জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই শপথ অনুষ্ঠানে ৬০০ নেতা-কর্মী অংশ নেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় দুপুর ১২টার দিকে। গাড়িতে পতাকা ও পুলিশ প্রটোকল নিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়ার আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি নেতা-কর্মীদের শপথবাক্য পাঠ করান। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের নাম ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ এবং দলের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বাদে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘শুধু হাত তুলে শপথ গ্রহণ করলেই কাজের কাজ কিছু হবে না। কারণ, আপনাদের ভেতরে সেই উৎসাহ–উদ্দীপনার অভাব রয়েছে। মনে জ্বালা রয়েছে। এতে প্রলেপ না লাগালে হবে না। আর যাঁদের মনে জ্বালা রয়েছে, তাঁরা সেই জ্বালা যদি হজম করতে না পারেন, তাহলে ক্ষতি হয়ে যাবে।’
মেয়র বলেন, ‘কথায় বলে, পচা শামুকে পা কাটে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা কেউ পচা শামুক নন, তাঁরা হীরা-জহরত। তাঁদের ফেলে দিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করা যাবে না। আপনাদের দায়িত্ব তাঁদের মানুষের হাতে–পায়ে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট নিয়ে জয়ী হতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে হবে না, এটা আমি পরিষ্কার বলে দিতে পারি।’
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল খালেক বলেন, পথে পথে নয়, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে। আজ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
আওয়ামী লীগের আরেক উপদেষ্টা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান বলেন, নিশ্চয় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু শুধু সংখ্যা বাড়লেই হবে না। সমর্থন আরও বাড়াতে হবে। ভালো ব্যবহার দিয়ে মন জয় করতে হবে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, মনোনয়ন পাওয়া না–পাওয়া সব নেতা-কর্মীকে ভেদাভেদ ভুলে যেতে হবে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সাবেক সাংসদ রাজশাহী-৩ আসনের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও রাজশাহী-৫ আসনের প্রার্থী তাজুল ইসলাম ফারুককে বুঝিয়ে তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাজশাহী-৬ আসনের প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে তৃণমূলের এমন অনেক নেতা-কর্মী রয়েছেন, গত পাঁচ বা দশ বছরে তাঁদের কাছে একবারও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তাঁদের কাছে যেতে হবে। তাঁদের হাতে–পায়ে ধরতে হবে। সেই কার্যক্রম সব প্রার্থীই শুরু করেছেন। আমি আমার এলাকায় সেটা অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে গেছি।’
রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। সেই জন্য আপনারা ক্ষমা করবেন। এই ভুল আর হবে না।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম, রাজশাহীর সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ আখতার জাহান, রাজশাহী-৪ আসনের সাংসদ ও প্রার্থী এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের প্রার্থী ডা. মনসুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।