চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গতকাল শনিবার কুমিল্লার আট উপজেলা পরিষদের প্রার্থীদের নিয়ে প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।
সভায় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ভয়ভীতি প্রদর্শন, পোস্টার লাগানোয় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে ভোটারদের কেন্দ্রে আসার সুযোগ ও ভোট রক্ষার দাবি জানান। কেউ কেউ সরকারি গাড়ি প্রচারণায় ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ করেন।
তবে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। যিনি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন, তিনি মেধা ও যোগ্যতা দিয়েই পেয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকবে। নির্বাচনে কেউ প্রভাব খাটাবেন না। আপনাদের নিরাপত্তা আমরা দেখব।’
বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওই সভা হয়। এতে জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন বক্তব্য দেন।
৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে এই নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে। এতে কুমিল্লার আট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩১ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ জনসহ ৮২ জন প্রার্থী রয়েছেন।
সভায় মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলটির চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার বলেন, এই উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুস সালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তিনি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। উপজেলা চেয়ারম্যানের দপ্তরে দলীয় লোক নিয়ে সভা করেন। এটা বন্ধ করতে হবে।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে বিশেষ বাহিনী দিয়ে এলাকায় ভীতসন্ত্রস্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছেন।
একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। লুটেরচর ইউনিয়নে তিনি পোস্টার লাগাতে দিচ্ছেন না। এই নির্বাচনে রাতের অন্ধকারে যেন ভোট কেটে ফেলা না হয়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘স্বতন্ত্র নির্বাচন যাঁরা করি, তাঁদের প্রশাসনকে সাহস দিতে হবে। হারি-জিতি সমস্যা নেই। নির্বাচন নির্বাচনের মতো করতে হবে।’
এই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রমিজ উদ্দিন বলেন, মেঘনায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। এই উপজেলার প্রতিটি মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলটির প্রার্থী আবুল হাসেম খান বলেন, ‘আমার উপজেলার গোমতী নদীর পশ্চিম অংশে চারটি ইউনিয়ন রয়েছে। সেখানে নির্বাচনের সময় মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।’
একই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নাদেরা পারভীন বলেন, অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
এই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশাসনকে করতেই হবে। এটা আমাদের চাওয়া।’
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিদ্রোহী প্রার্থী মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ভোটারের কাছে ভোট চাইতে গেলে বলেন, ‘ভোট দেব, রক্ষা করতে পারবেন তো?’ ভোট গণনা পর্যন্ত প্রশাসনকে কঠোর থাকতে হবে।
মুরাদনগর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া খন্দকার বলেন, মুরাদনগরে গত দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ও কারচুপি হয়েছে। এবার যেন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
সভায় র্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব আপনাদের (প্রার্থীদের)। বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর শক্ত হাতে দমন করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, আচরণবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি গাড়ি কোনো চেয়ারম্যান নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। সেটি নিয়ে নেওয়া হবে।