বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এবং প্রাচীন বিলের নাম আড়িয়ল বিল। এ বিলের অবস্থান ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিমি দক্ষিণে পদ্মা এবং ধলেশ্বরী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে। এটি ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে।
বিলের অন্যতম প্রধান ফসল হিসেবে বিবেচিত হয় ইরি-২৯ ধান, যা শুষ্ক মৌসুমে রোপণ করা হয়। এখানকার বিশালাকৃতির মিষ্টি কুমড়া দেশব্যাপী আলোচিত। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ মিষ্টি কুমড়া খেত থেকে সংগ্রহ করা হয় বলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব এর ওপর খুব একটা পড়েনি। কিন্তু ইরি-২৯–এর সংগ্রহ শুরু হয় বৈশাখের শেষে। গেল সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণের কারণে ধানখেতগুলোতে প্রচুর পানি জমে আছে। পানি নামছেই না। ধান পাকতেও কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
করোনা–আতঙ্কের জন্য যথাযথ পরিমাণে ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে মাঝেমধ্যে হালকা-মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে প্রায়ই। আবার কালবৈশাখীতে বেশ কিছু জমিতে ধান শুয়ে পড়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে আধপাকা ধান। সময় যতই গড়াচ্ছে চাষিদের আকাশে কালো মেঘ ততই ঘনাচ্ছে। আসছে বৃষ্টির মৌসুম নিয়ে আতঙ্কের তো শেষই নেই। এ ছাড়া পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ধান কাটতে গিয়ে অসুস্থতার শঙ্কা তো আছেই। ফলন ভালো হওয়ার পরও প্রকৃতির এ বিরূপ আচরণের জন্য কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
এ জনপদে বসবাসকারী মানুষের প্রায় সারা বছরের আহার্য চাল মজুতের বড় উৎস এ বিল। তাই এ বিলের ফসলের ক্ষতি হলে বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার শঙ্কা থাকবে এই অঞ্চলের জনগণের।
আড়িয়ল বিল অতি প্রচীনকাল থেকে দেশের একটি নিম্নভূমি হিসেবে পরিচিত। প্রায় হাজার বছর আগে এটি গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থল ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীকালে নদী দুটির গতিপথ পরিবর্তনের ফলে এ বিস্তীর্ণ জলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে এ বিলের প্রায় ৪০ বর্গ কিমি শস্যভূমিতে পরিণত হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ও দোহার, ঢাকা।