হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমেদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদী মো. মঈন উদ্দিন। হেফাজতে ইসলামের বতর্মান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এবং তাঁর অনুসারীরা এই হুমকি দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন আহমেদ শফীর শ্যালক ও মামলার বাদী মঈন উদ্দিন।
আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মঈন উদ্দিন লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় হেফাজতের নেতা মো. মাঈনুদ্দিন রুহী, আবুল কাশেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, আহমেদ শফীর ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও হুমকিজনিত নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি আসেননি। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘শফী হুজুরকে হত্যা করার পর আমরা সত্য কথা বলতে পারিনি। আমাদের পরিবারের সব সদস্যকে একের পর এক হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিবার থেকে আমি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছি। নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে মামলা যাতে প্রত্যাহার করে নিই। জুনায়েদ বাবুনগরী যদি অপরাধী হয়ে থাকেন, তদন্তে যদি প্রমাণ হয় তবে তাঁর শাস্তি দাবি করছি। দোষী না হলে তা তদন্তে প্রমাণ হবে। আমাদের মামলা প্রত্যাহার করার হুমকি কেন দিচ্ছেন। এর তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, মামলাটির তদন্ত যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং অন্যায়কারীদের শাস্তি হয়।’
মঈন উদ্দিন আরও বলেন, ‘পিবিআই মামলার তদন্ত করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হকেরা একের পর এক হুমকি দিয়ে চলেছেন মামলা প্রত্যাহারের জন্য। আমরা জানতে পেরেছি হাটহাজারী মাদ্রাসার নিরীহ শিক্ষক ও ছাত্রদের জুনায়েদ বাবুনগরী ব্যক্তিগতভাবে উস্কানি দিচ্ছেন। উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে হাটহাজারী মাদ্রাসাকে ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার মতো পবিত্র জায়গাকে কুলষিত করার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরী মিথ্যাচার করেছেন উল্লেখ করে মঈন উদ্দিন বলেন, ২৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, শফী হুজুরের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল। এটা মিথ্যাচার। পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলা ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলেছেন। বাবুনগরী মিথ্যাচার করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘১৮ সেপ্টেম্বর শফী হুজুরকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর কী কী ঘটেছে, তা আপনারা জানেন। হুজুরের রুম কীভাবে ভাঙচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন। জোরপূবর্ক শফী হুজুরকে মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘শফী হুজুরকে সরাসরি হত্যা করা হয়েছে, তা বলছি না। তবে এটা অ্যাটেমপ্ট টু মার্ডার। হত্যার জন্য যা যা করা দরকার সবই করা হয়েছে। তাই এখানে লাশ তুলে ময়নাতদন্তের দরকার নেই। এটা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে তাঁর মৃত্যুর কারণ।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মঈন উদ্দিন বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। হুমকির বিষয় প্রতিনিয়ত পুলিশকে অবহিত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শফী হুজুরকে হত্যার অভিযোগ এনে ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা করা হয়। এরপর মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন করে মামলাটি মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ করা হয়।