আহমদ শফীর দাফন সম্পন্ন

হেফাজত ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী
ছবি: সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ২টা ১৫ মিনিটে তাঁর জানাজা সম্পন্ন হয়। মাদ্রাসার উত্তর-দক্ষিণ পাশের সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা অংশ নেন। জানাজা শেষে তাঁকে মাদ্রাসার ভেতর উত্তর মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানাজায় ইমামতি করেন আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ। জানাজার আগে তিনি উপস্থিত লোকজনসহ দেশবাসীর কাছে তাঁর বাবার জন্য দোয়া চান।

জানাজায় অংশ নেন স্থানীয় সংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান, এসপি এস এম রশীদুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের নেতারা।

জানাজার আগে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব ও মাদ্রাসার শিক্ষক জুনায়েদ বাবুনাগরী বলেন, ‘হুজুর আমাদের ছেড়ে গেলেন। তবে হেফাজতের আন্দোলন আগের মতো অব্যাহত থাকবে।’

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শাহ আহমদ শফীর মরদেহ বহন করা গাড়িটি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ঢোকে। ঢাকা থেকে গাড়িটি ভোরে রওনা হয়।

আগেই মাদ্রাসার ভেতর উত্তর মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে কবর খোঁড়া শেষ করা হয়।
সকাল থেকেই জানাজায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় আসতে শুরু করেন। লোকজনের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে যায় মাদ্রাসার মাঠ। সকাল ১০টা থেকে হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

লোকসমাগম বেড়ে যাওয়ায় হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর জানাজা ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ চার উপজেলায় বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। তদারকিতে আছেন সাত ম্যাজিস্ট্রেট। হাটহাজারীতে চারজন এবং বাকি তিনজন তিন উপজেলায়।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার পর রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে শাহ আহমদ শফী ইন্তেকাল করেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর খবর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ জানান, আহমদ শফীর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।

শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম বরকম আলী, মা মোসাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক। ছোট ছেলে আনাস মাদানী হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক।

আহমদ শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।

১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। ছাত্রদের বিক্ষোভের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির সভায় আহমদ শফী মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালকের পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পরপরই মাদ্রাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন।