হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের ৩৬ নেতা-কর্মীকে আসামি করে নালিশি মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দের আদালতে মামলাটি করেন প্রয়াত আমিরের শ্যালক মো. মঈনুদ্দীন। তিনি হেফাজতের কোনো পদে নেই।
মামলায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস, সহকারী মহাসচিব হাবিব উল্লাহ, সহকারী অর্থ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জী, হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী (খাদেম) এনামুল হাসান ফারুকীসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা সবাই হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মী।
বাদীর আইনজীবী আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে আহমদ শফীকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়, অসুস্থ হলেও আহমদ শফীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় তাঁর কক্ষে আটকে রাখা হয়। তাঁর কক্ষে আসামিদের ইন্ধনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। মাদ্রাসা মাঠে আহমদ শফীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখা হয়। আর এটি আটকে রাখার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেন এনামুল হাসান ফারুকী।
মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছে। এটি হাটহাজারী মাদ্রাসার বিষয়। এখানে হেফাজতের কোনো নেতার ইন্ধন কিংবা ভূমিকা নেই। মামলায় কী অভিযোগ আনা হয়েছে, এখনো দেখতে পারিনি। দেখার পর সাংগঠনিকভাবে বিস্তারিত বক্তব্য দেওয়া হবে।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী মারা যান। শফীর ছেলে আনাসকে চট্টগ্রামের দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক পদ থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর জোহরের নামাজের পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্ররা। তাঁরা মাদ্রাসার সব কটি ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। আনাসসহ কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীকে মাদ্রাসার ভেতরে পেয়ে মারধর করেন ছাত্ররা।
ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মাদ্রাসাটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ান আহমদ শফী। একই সঙ্গে তাঁর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় শুরা কমিটি। দাবি মেনে নেওয়ায় ওই দিন রাতে ছাত্ররা আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আহমদ শফীর মৃত্যুর পর থেকেই আমির নির্বাচন নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়। ১৪ নভেম্বর ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তোলে আনাস মাদানীর অনুসারী একটি অংশ। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রয়াত আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন। আর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ।
১৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচিত হন জুনায়েদ বাবুনগরী। এর আগে তিনি সংগঠনটির মহাসচিব ছিলেন। ১৫১ সদস্যের কমিটিতে আমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীসহ তাঁর অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি।