আহত প্রার্থী হাসপাতালে

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নূরুর রহমান। গতকাল সকালের ছবি। প্রথম আলো
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নূরুর রহমান। গতকাল সকালের ছবি।  প্রথম আলো

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের জে এম নুরুর রহমানের ওপর গত বুধবার দুপুরে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট বন্দরে হামলার ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নুরুর রহমান অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ পংকজ দেবনাথের সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা করেছেন। তবে সাংসদ পংকজ দেবনাথ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নুরুর রহমান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ইউনিট-১-এ চিকিৎসাধীন। অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুদীপ হালদার বলেন, ওনার (নুরুর রহমান) পায়ে অভ্যন্তরীণ আঘাত (ব্ল্যান্ট ইনজুরি) রয়েছে। ব্যথা ও ফুলে যাওয়ার কারণে ব্যান্ডেজ (লংলেগ ব্যাক স্ল্যাব) করে দেওয়া হয়েছে। সুস্থ হতে ছয়-সাত দিন লাগবে।

নুরুর রহমান জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে তিনি প্রচারণার জন্য মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট বন্দরে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন ওই এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি তাঁর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কর্মিসভা করছেন। এ জন্য তিনি বিকেলে গণসংযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফসার হোসেনের বাড়িতে যান। বেলা একটার দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভা শেষ হওয়ার পর ২০০-৩০০ লোক আফসার হোসেনের বাড়ির দিকে আসেন। সেখানে এসে তাঁরা আফসার হোসেনের বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এরপর বাড়ির বাইরে ভাঙচুর চালিয়ে ভেতরে ঢুকে তাঁকে (নুরুর রহমান) মারধর করেন এবং মুঠোফোন ও ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। পংকজ দেবনাথের বিপক্ষে নির্বাচন করায় তাঁরা হুমকি দেন।

ধানের শীষ প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ঘটনার অনেক পর পুলিশ এলেও তারা কোনো সহায়তা করেনি। পরে কোনোভাবে উদ্ধার হয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি মেহেন্দীগঞ্জ ত্যাগ করেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পংকজ দেবনাথ বলেন, ‘উনি (নুরুর রহমান) কোথায় গিয়েছেন, কারা তাঁকে মেরেছে, তা আমাদের নেতা-কর্মীদের জানার কথা নয়। মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ মেহেন্দীগঞ্জের সাবেক সাংসদ ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই মেহেন্দীগঞ্জ বিএনপি চলছে। তিনি মনোনয়ন পাননি বলে দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। এটা মূলত বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এখানে আওয়ামী লীগের কারও জড়িত থাকার সুযোগ নেই।’

তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, ‘মেহেন্দীগঞ্জে বিএনপিতে কোনো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নেই। আমাদের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের ভয়ে প্রচার-প্রচারণাই চালাতে পারছেন না। আমাদের প্রার্থীর ওপর তারা হামলা চালিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে।’

মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি শাহিন খান জানান, প্রার্থীদের গণসংযোগ নিয়ে একটু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে সেখানে তেমন কিছু হয়নি।

হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

এদিকে নুরুর রহমানের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি। বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁদের প্রার্থী নুরুর রহমান নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। এমনকি তাঁর সঙ্গের লোকজনের ওপর প্রতিনিয়তই হামলা, মামলা করা হচ্ছে।

রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সরকারদলীয় সাংসদ পংকজ দেবনাথ তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতার আশ্রয়ে লালিত-পালিত সন্ত্রাসী, গুন্ডা বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন চালাচ্ছেন। একচেটিয়াভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো দূরের কথা, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন–মারধর করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, ‘বুধবার সোহেল মোল্লা, মনির জমাদ্দার, শাকিল ও বাবুলের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়তই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাতে মাঠে নামতে পারছি না।’