মুক্তিসংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের বর্ণনা দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর লড়াই, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পররাষ্ট্রনীতির মঞ্চায়ন ছিল পরিবেশনায়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার গল্প ছিল পরতে পরতে। আর উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতায় সমৃদ্ধ, আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায় হয় সমাপ্তি অনুষ্ঠানের।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানের সমাপনী ছিল শুক্রবার। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দুই দিনব্যাপী এ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। শুক্রবার বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের অর্ধশতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ছিল এবার। এ দুই বিশেষ উপলক্ষ উদ্যাপনের জন্য সারা বছরই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বৈচিত্র্যময় কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। করোনা সংক্রমণের তীব্রতা অনেকটাই কমে আসায় দেশি-বিদেশি অতিথিদের অংশগ্রহণে দুদিনব্যাপী আয়োজন করা হয় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানের।
গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আসন গ্রহণের পর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী নিজ আসনে বসে উপভোগ করেন বিভিন্ন পরিবেশনা। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পুরো অনুষ্ঠানে কী কী থাকবে তার ধারা বর্ণনা ছিল প্রথম পরিবেশনায়। মাসুম রেজার রচনায় পুঁথিগানের মাধ্যমে তা তুলে ধরেন মাসুম আজিজ। পুঁথিগানে উঠে আসে মুক্তিসংগ্রামের বর্ণনা, বিধ্বস্ত দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ, সাম্প্রতিক বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা। প্রতিটি পরিবেশনার আগে এর বিষয়বস্তুও পুঁথিগানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
দুই পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে সংসদ ভবনের দেয়ালে ছিল আলো-ছায়ার খেলা। এর মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উক্তি ও ভাষণ, ২৫ মার্চের কালরাতের ঘটনা ও বাংলার মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস। অনুষ্ঠানের ঘোষকের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস রাখতেন সমৃদ্ধিতে, বিশ্বশান্তিতে। বিশ্ব এখন সেই স্বপ্ন দেখে, যা বঙ্গবন্ধু দেখেছেন অর্ধশত বছর আগেই।’
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরতে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে দলগত আবৃত্তিতে অংশ নেন ৪০ জনের বেশি আবৃত্তিশিল্পী। পরিবেশনায় নেতৃত্ব দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। সোহেল আনোয়ারের গ্রন্থনা, হাসান আরিফের নির্দেশনায় আবৃত্তির সংগীতায়োজন করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।
‘একটাই আছে দেশ’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের থিম সংয়ের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে ‘নৃত্যাঞ্চল’। গানটির সুর করেছেন সাজিদ সরকার, কম্পোজ করেছেন জুলফিকার রাসেল। শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে এ নাচের নেতৃত্ব দেন শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নীপা। শিখর সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় ছিল দেশের মানুষের জয়গান।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক, সম্প্রীতির। এ ধারণা সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে পরিবেশনায় অংশ নেয় সাধনা শিল্পীগোষ্ঠী।
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শ অনুসরণ করে বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগীতের মাধ্যমে সেই বৈশ্বিক বন্ধুত্বকে তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের শিল্পী অর্ণবের সঙ্গে সংগীতায়োজনে ছিলেন স্কটল্যান্ড, সেনেগাল ও তুরস্কের চার শিল্পী। পরিবেশনায় অংশ নেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের এসব বড় সাফল্য নিয়ে ‘দেশের সমৃদ্ধির কথা’ গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। ইমন চৌধুরীর সুরে পরিবেশনাটি পরিচালনা করেছেন তারিক আনাম খান।
শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী এবং রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে বিশেষ পরিবেশনায় আটটি বিভাগের ৮৫ জন কচি-কাঁচা শিল্পী অংশ নেয়। এ পরিবেশনার সংগীতায়োজন করেন ইবরার টিপু। শিশুরা গায় ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী’। বড়রা তাদের সঙ্গ দেন ‘আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে’ গেয়ে।
অনুষ্ঠানের শেষটা ছিল আলোয় ভরা। কবি কামাল চৌধুরীর লেখা ও শারমিন সুলতানার সুরে গানের সঙ্গে শিল্পীরা দেখান আলোর খেলা। আলোর খেলা সাজান নাসিরুল হক। নৃত্য পরিচালনা করেছেন মাশরুর রহমান ও মাহবুব। এর মধ্য দিয়ে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় শেষ হয় দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।