আলী আমজদের ঘড়ি

অনেক পর্যটক এখন আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে আসেন। ছবি: আনিস মাহমুদ
অনেক পর্যটক এখন আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে আসেন।  ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট অঞ্চলে প্রবাদতুল্য একটি পঙ্‌ক্তির খুব প্রচলন ছিল,—‘চাঁদনী ঘাটের সিঁড়ি/ আলী আমজদের ঘড়ি/ জিতু মিয়ার বাড়ি/ বঙ্কু বাবুর দাড়ি।’ এ পঙ্‌ক্তির মাধ্যমে সিলেটের পরিচিতিসূচক চারটি ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বঙ্কুবাবু মারা গেছেন সেই কবে। বাকি তিনটি ঐতিহ্য এখনো টিকে আছে। এর মধ্যে আলী আমজদের ঘড়িঘরের বয়স হয়েছে ১৪৫ বছর। এক বছর ধরে ঘড়িটি বিকল থাকলেও গত আগস্ট মাসে তা পুনরায় সচল করা হয়েছে।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, আলী আমজদের ঘড়ি ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপনা। অনেক পর্যটকও এখন এটি দেখতে আসেন। অথচ মাঝেমধ্যেই ঘড়ির কাঁটা দিনের পর দিন থমকে থাকে। এ ঘড়িঘরের আশপাশ অপরিচ্ছন্ন থাকে সব সময়। ঐতিহ্যের স্বার্থে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

নগরের সুরমা নদীর পাড় আর সারদা হলের মাঝখানে শহরের জিরো পয়েন্ট। তার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই আলী আমজদের ঘড়ির অবস্থান। কিনব্রিজ পার হয়ে শহরের উত্তর অংশের ঠিক প্রবেশমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এটি ১৮৭৪ সাল থেকে। ওই বছর তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেটে সফরে এসেছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে। ভারতের দিল্লির চাঁদনী চক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নবাব ঘড়িটি স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলে গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন।

ঘড়িটি দেখভাল করার দায়িত্বে আছে সিলেট সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আলী আমজদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট, ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা ৭ ফুট, ঘড়ির ওপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। মোট উচ্চতা ২৬ ফুট। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা।

লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এই ঘড়ি। এই নান্দনিক স্থাপনা যে কাউকে মুগ্ধ করে। এ ঘড়ি সিলেটের প্রতীক হিসেবে এখন দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা ঘড়িটি বিধ্বস্ত করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পর কিছুসংখ্যক প্রবাসী, আরও পরে তৎকালীন সিলেট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটি সচল করতে উদ্যোগী হয়। বারকয়েক সংস্কার করা হলেও নানা সময়ে ঘড়িটি অচল হয়ে পড়ত। ২০১৬ সালে সিটি করপোরেশন ঘড়িটি পুনরায় সচল করে। দীর্ঘদিন ঘড়িটি সচল ছিল। গত বছর পুনরায় বিকল হলে ঘড়ির কাঁটা থেমে গিয়েছিল। দেড় মাস আগে পুনরায় এটি সচল করা হয়।