সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ও তাঁর স্ত্রী রহিমা খানমকে হত্যা মামলা সূত্রে আট বছর আগে সিমকার্ডসহ (ঘটনা সম্পৃক্ত আলামত) সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলাম সুজনের নিরুদ্দেশ হওয়া অকল্পনীয়। ওই মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন অভিমত এসেছে।
এই ঘটনায় পল্টন মডেল থানার তখনকার দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে বিভাগীয় অনুসন্ধান করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে অনুসন্ধান ফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ বুধবার প্রকাশিত হয়।
ফরহাদ খাঁ হত্যা মামলায় ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালতের রায়ে ওই দম্পতির ভাগনে নাজিমুজ্জামান ওরফে ইয়ন ও তাঁর বন্ধু রাজু আহমেদ ওরফে রাজুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর গত বছরের ১৬ অক্টোবর রায় দেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে ওই দুই আসামির সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেন, পল্টন মডেল থানায় ২০১১ সালের ৩০ জানুয়ারি এবং তার পরপর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ডেপুটেশনে র্যাব-৩-এ থাকা উপপরিদর্শক মো. আব্দুস সালেকের সই করা নোটে দেখা যায়, শফিকুল ইসলাম সুজন (১৮) নামের একজনকে নিহত ফরহাদ খাঁর সিম নম্বরসহ গ্রেপ্তার করা হয় এবং পল্টন মডেল থানার ওসির কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হয়। তখন র্যাব-৩ ডেপুটেশনে থাকা সহকারী উপপরিদর্শক মো. সিদ্দিকুর রহমান ওই সিমকার্ড ও মুঠোফোন মিন্টু মিয়া ও মো. শরিফুল ইসলাম নামে স্থানীয় দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে জব্দ করেন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ওই মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. জিল্লুর রহমান তাঁর কেস ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, ৩০ জানুয়ারি সন্দেহভাজন হিসেবে শফিকুল ইসলাম সুজনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মামলায় নম্বর, তারিখ ও থানার নাম সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি উল্লেখ আছে। তবে হাকিমের (ম্যাজিস্ট্রেট) আদেশনামায় তাঁকে (সুজন) আদালতে হাজির করার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে না। কথিত শফিকুল ইসলাম সুজন অভিযুক্ত বা তাঁকে মুক্তি দেওয়ার কোনো সুপারিশ তদন্ত প্রতিবেদনে নেই। তাঁর ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল সে–সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড নেই।
রায়ে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যখন এজাহার হয়ে গেছে এবং এজাহার সূত্রে সিমকার্ডসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন আটক ব্যক্তিকে আইন অনুসারে অবশ্যই আদালতে হাজির করা উচিত ছিল, যেখানে প্রাথমিকভাবে সে ঘটনায় সম্পৃক্ত বা নির্দোষ। আশ্চর্যজনকভাবে মামলার রেকর্ডে এসব অনুপস্থিত। সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলায় ঘটনা সম্পৃক্ত আলামতসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নিরুদ্দেশ হওয়া অকল্পনীয়।
আদালতের রায়ে আরও বলা হয়, ঘটনার সময় পল্টন মডেল থানায় যাঁরা দায়িত্ব ছিলেন, তাঁরা সাধারণভাবে এটি এড়াতে পারেন না। শফিকুল ইসলাম সুজনের গ্রেপ্তার বিষয়ে তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে এবং ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে হবে। অন্যথায় আইন প্রয়োগকারীদের হাতে আইনের শাসন ঝুঁকির মুখে পড়বে। এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিভাগীয় অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে এবং অনুসন্ধান ফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হলো।