চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দা নদী এখন বেশ শান্ত। পৌষের শীতে শুষ্ক নদীতে স্রোত নেই বললেই চলে। এই নদীর ওপর নির্মিত বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুটি সব সময়ই ব্যস্ত। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এই সেতুর ওপর যান ও জনতার চলাচলের মাত্রা যেন আরও বেড়ে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মধ্যে থাকা সেতুটির দিকে প্রার্থীদের নজর পড়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে জীবন দেওয়া বীরশ্রেষ্ঠের নামে নির্মিত এই সেতুর ওপর দুই পাশে ২৪টি ল্যাম্পপোস্ট আছে। নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের আবদুল ওদুদ ও আপেল প্রতীকের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল তাঁদের ছবিযুক্ত বড় বড় প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন ল্যাম্পপোস্টগুলোয়। ধানের শীষের বিএনপির প্রার্থী হারুনুর রশীদ আজই কয়েকটি ল্যাম্পপোস্টে প্ল্যাকার্ড টাঙিয়েছেন। শুধু এই সেতুতে নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বেশির ভাগ স্থানে পাশাপাশি টাঙানো রয়েছে নৌকা আর আপেল প্রতীকের প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার আর প্ল্যাকার্ড।
আমের জন্য বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আপেলের প্রচার স্থানীয় মানুষের মধ্যেও কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে।
বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ হারুনুর রশীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে জামায়াতের নূরুল ইসলাম প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধানের শীষকে হারাতে জামায়াত নৌকা প্রতীককে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, নৌকার প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এ ধরনের কাজ করছেন। তাঁরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির সমালোচনা করছে। কিন্তু নৌকার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলছে না।’
তবে বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে এখানে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যিনি জিতবেন, তিনি হবেন জোটের সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, ‘হারুনুর রশীদের স্ত্রী পাপিয়া আক্তার ২৫ মিনিট বক্তব্য দিলে ২৩ মিনিট আমার বিরুদ্ধে কথা বলেন। সেই ক্যাসেট আমার কাছে আছে। কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে এমন প্রমাণ দেখাক। হারুনুর রশীদ ও ওয়াদুদ সম্পর্কে চাচাতো ভাই। হারুন সরকারি কাজের ঠিকাদার। তাঁর নির্বাচনী সভায় পুলিশ প্রহরা দেয়।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন নিয়ে কখনোই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সমঝোতা হয়নি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের লতিফুর রহমান সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপির হারুনুর রশীদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪৭ হাজার ভোট পান। তখন জয়ী হন হারুন। আবার ২০০১ সালে হারুনের কাছে হেরে গেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৬০ হাজারের বেশি ভোট পান তিনি।
জামায়াতের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (হারুনুর রশীদ) কর্মী ধরে রাখতে পারেন নাই। নেতা ধরে রাখতে পারেন নাই। জামায়াত তো তাদের ২০-দলীয় জোটের সঙ্গী।’
জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের দাবি, এই আসনে তাঁদের প্রায় ৮০ হাজার ভোটার রয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যানও তাঁদের। এখানে সাংগঠনিক ভিত্তিও শক্ত। অন্য দল থেকে কেউ নির্বাচিত হতে গেলে জামায়াতের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।
আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫৮০ জন। সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপেও ভোটাররা তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। শহীদুল ইসলাম নামের এক ভোটার বলেন, ‘সবার প্রতিশ্রুতি দূর থেকে শুনছি।’