- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাখ্যায় সন্দেহ প্রকাশ
- মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন করে তা প্রয়োগের ওপর জোর
মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তো যুদ্ধের মধ্যে নেই। একটা স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে বাস করছি। প্রতিদিন পাঁচ-ছয়জন করে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা প্রশ্ন রাখেন, কেন এভাবে মাদক-সন্ত্রাস দমন করতে হচ্ছে? আর কোনো উপায় কি নেই?
জাতিসংঘের সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ প্রক্রিয়ার আওতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে গতকাল সোমবার সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার-কর্মীদের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সুলতানা কামাল বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে আরও কঠোর হতে হবে। তবে অপরাধী যত দুর্ধর্ষই হোক না কেন, এর বিচার আইনের আওতায় হতে হবে। সরকারের বাহিনীকে বন্দুক দেওয়া হয়েছে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু সেই সঙ্গে বন্দুক ব্যবহারের বিধিও দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বিধিবিধান মেনে বন্দুক ব্যবহার করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাখ্যায় সন্দেহ প্রকাশ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আসলে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে কি না, কিংবা বন্দুকের অপব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটা আমাদের জানা দরকার। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এই অস্ত্রটা আমরাই তুলে দিয়েছি। তাই এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে স্পষ্টভাবে আমাদের জানাতে হবে।’
মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন করে তা প্রয়োগের ওপর জোর দেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তার আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে।’
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় বাংলাদেশ গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ এবং মৃত্যুদণ্ড বিলোপ-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে সই না করা প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড দিয়ে অপরাধ রোধ করা যায় না। নিম্ন আদালতে প্রায়ই অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। এ বিষয়ে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে।’
সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাকটিভিজম (সিএসএ), নেটওয়ার্ক অব নন-মেইনস্ট্রিম মারজিনালাইজড কমিউনিটি (এনএনএমসি), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এবং কাপেং ফাউন্ডেশন এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে আমাদের কারোই দ্বিমত নেই। কিন্তু যে পদ্ধতিতে কাজটি হচ্ছে, সেটি সঠিক না। এভাবে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকলে একসময় দেশে আইনের শাসন বলে কিছু থাকবে না।’
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন সিএসএর সদস্য আকলিমা ফেরদৌস। আরও বক্তব্য দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা পল্লব চাকমা।
আরও পড়ুন...