কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গি আবির রহমান কীভাবে উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) কর্তৃপক্ষ। তাঁকে ওই পথে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ উদ্বুদ্ধ করেছে কি না, তা-ও খোঁজ করছে তারা।
এনএসইউর উপাচার্য আতিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার বসুন্ধরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের পাশে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত আবির রহমান (২২) এনএসইউর বিবিএর ছাত্র ছিলেন। ঘটনার চার মাস আগে নিখোঁজ হন তিনি। তবে তাঁর নিখোঁজ থাকার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় ঈদের আগের দিন।
সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁ এবং শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে।
উপাচার্য গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় যে ছাত্রটির কথা বলা হচ্ছে, সে আমাদের ছাত্র। তাকে আমরা অস্বীকার করতে পারছি না। আমরা খোঁজ করছি, কীভাবে সে এই পথে গেল। এ থেকে আমাদেরও অনেক কিছু জানার আছে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে আমরা জানার চেষ্টা করছি সে কীভাবে উগ্রবাদের দিকে গেল। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে কেউ এ ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে কি না।’
গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রকৌশলী হাসনাত করিম সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ২০১২ সালের আগস্টে পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে চান উল্লেখ করে এই প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি নেন হাসনাত করিম। তাঁর বিরুদ্ধে ওই সময় কোনো অভিযোগ ছিল না। এরপর গত চার-পাঁচ বছর তিনি কী করেছেন, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জানার কথা নয় বলেও তিনি দাবি করেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নিবরাস ইসলামের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে বিবিএর শিক্ষার্থী ছিলেন নিবরাস। তিনি তিনটি সেমিস্টার সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মালয়েশিয়া চলে যান। এরপর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। খুব সম্ভবত মালয়েশিয়ায় তিনি উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। আবার এমনও হতে পারে, বাংলাদেশে কেউ বীজটা বপন করে দিয়েছে, মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেটি বিস্তার লাভ করেছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ক্ষেত্রে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
উপাচার্য বলেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এসেছে। যেসব ঘটনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসছে, সেসব ক্ষেত্রে উগ্রবাদের একমাত্র উপাদান এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। এখানে একজন শিক্ষার্থী সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় কাটান। তার বাইরে যে সময়টা আছে, সেটি তিনি বিভিন্ন জায়গায় পার করছেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়া আছে, ইন্টারনেট আছে, সেগুলোর মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ডে তাঁদের আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো ছাত্র নিখোঁজ আছে কি না, এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু অনিয়মিত ছাত্র আছেন। নানা কারণে ছাত্ররা অনিয়মিত হন। পারিবারিক ব্যবসা, অসুস্থতা বা অর্থসংকটের কারণে এমনটা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র খুলেছে। বিভিন্ন বিভাগের কাছে এ ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই সমন্বিত তথ্য পাওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে গত ছয় মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনিয়মিত ছাত্রের সংখ্যা বাড়েনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো ছাত্র আর সেমিস্টার গ্যাপ দিতে পারবেন না। কেউ তা করতে চাইলে কারণসহ আগে বিশ্ববিদালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। আবেদনের সময় বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।