গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া গত মার্চে শুরু হলে এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। আন্দোলন ও জনমতের চাপে তখন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তবে ঈদের ছুটির পর গতকাল রোববার প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইঙ্গিত দিলেন, আবাসিক ও শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে।
সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বললেন, বিইআরসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। গ্যাসের দাম ‘সমন্বয়’ করার জন্য গত বছর থেকে অপেক্ষা করছে তাঁর মন্ত্রণালয়।
জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে বিইআরসি। আইন অনুযায়ী, গ্যাসের দাম বাড়াতে হলে প্রথমে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব দিতে হয় গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পেয়ে গত মার্চ মাসে গণশুনানি করলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বিইআরসি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো লাভে থাকলে বিইআরসির আইন অনুযায়ীই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে না। দেশে গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি একটি। আর বিতরণ কোম্পানি তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলীসহ ছয়টি। এর মধ্যে একটি (সুন্দরবন) ছাড়া বাকি পাঁচটি কোম্পানিই লাভে রয়েছে। একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএলও লাভে আছে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দাবি, গ্যাসের দাম সমন্বয় না করলে সরকারকে চলতি অর্থবছরে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘গ্যাসে আমরা ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় করে ফেলেছি। এখন সামনে আরও ১৪ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এই টাকাটা আসবে কোথা থেকে? যদি সমন্বয় না করা হয়, সে ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে।’ তিনি বলেন, এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি শুরু হয়েছে। এই গ্যাসের দাম নিজস্ব গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি।
>এক চুলার বিল ১৩৫০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ১৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব
মার্চে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি হলেও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বিইআরসি
গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর এই যুক্তির সঙ্গে একমত নয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সংগঠনটির জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসক্ষেত্রে যে অনিয়ম, দুর্নীতি রয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণ করলে বছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বাঁচানো যাবে। কুষ্টিয়া, খুলনায় গ্যাস যাবে না জেনেও সেখানে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেষ্টা না করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এলএনজি আনাটা ছিল অপরিকল্পিত। গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি শুধু সাধারণ মানুষকেই ভোগাবে না, দেশের শিল্প উৎপাদনেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিইআরসিকে তিতাস গ্যাস কোম্পানির দেওয়া প্রস্তাব ছিল এক চুলার জন্য ১ হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলার ক্ষেত্রে ১ হাজার ৪৪০ টাকা। রান্নাঘরে যাঁদের গ্যাসের চুলা একটি, তাঁরা এখন মাসে বিল দেন ৭৫০ টাকা। যাঁদের বাসায় দুই চুলা, তাঁরা বিল দেন ৮০০ টাকা।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, গ্যাস খাতে লোকসান কমাতে হলে প্রথমে চুরি ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি সাগর ও স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে হবে। দেশীয় গ্যাস পেলে কম টাকায় সরবরাহ করা যাবে। এলএনজি আমদানি করে গ্যাস-সংকট দূর করা যাবে না।