বন্যার পানি কমে যাওয়ায় সড়কে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করছে সিলেটে সিটি করপোরেশন। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের মিরাবাজার এলাকা থেকে তোলা
বন্যার পানি কমে যাওয়ায় সড়কে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করছে সিলেটে সিটি করপোরেশন। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের মিরাবাজার এলাকা থেকে তোলা

‘আবার যদি বন্যা হয়’ আতঙ্কে সিলেটে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফেরা লোকজন

পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে সুরমা নদীর পানি উপচে সিলেট নগরের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। গত সোমবার থেকে সে পানি কমতে শুরু করেছে। নগরের বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছিল ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র। সেগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। পানি নেমে যাওয়ায় গতকাল বুধবার সেসব আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। তবে বাড়ি ফিরলেও তাঁদের ভয়, সামনে বর্ষা মৌসুম। ফের বন্যা হলে কী করবেন তাঁরা?

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। পানি কমে যাওয়ায় তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। ভবিষ্যতে যদি এমন দুর্যোগ আবার দেখা দেয়, তাহলে পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা নেবে করপোরেশন।  

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট নগরের মিরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়টি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছিলেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। বেঞ্চগুলো সারিবদ্ধ করে রাখছিলেন তাঁরা। নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সচিব সুজন অলমিক ওই আশ্রয়কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চারতলার ভবনটিতে প্রায় সাড়ে ৪০০ আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন। পানি নেমে যাওয়ায় বাসিন্দারা সোমবার থেকে নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছিলেন। সর্বশেষ গতকালই সব বাসিন্দা নিজ নিজ ঘরে ফিরে গেছেন। এখন আশ্রয়কেন্দ্র ফাঁকা।

আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন যতরপুর এলাকার বাসিন্দা রেজিয়া বেগম (৫০)। আজ সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরের দিকে মালপত্র নিয়ে ঘরে ফিরেছেন তিনি। তাঁর দুই ছেলে ও পুত্রবধূ আগেই ঘরে ফিরেছিলেন। বন্যায় ঘরটিতে কোমরসমান পানি হয়েছিল।

রেজিয়া বেগম বলেন, এবারের মতো আশ্রয়কেন্দ্রে কাটিয়েছেন। সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। এর মধ্যে ফের এমন অবস্থা দেখা দিলে আবার কোথায় গিয়ে উঠবেন, তা নিয়ে চিন্তিত বলে জানান তিনি। রেজিয়া বেগম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে এক সপ্তাহের বেশি সময় অবস্থান করেছি। রান্না করে খাওয়ার সমস্যা ছাড়া আর তেমন সমস্যা ছিল না। পরবর্তী দুর্যোগ দেখা দিলে যাতে আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে আশ্রয়কেন্দ্রের নাম ঘোষণা করা হয় সে দাবি জানান তিনি।

এদিকে আজ সকালে যতরপুর, তালতলা, জামতলা, শাহজালাল উপশহর, তেররতন, সোনাপাড়া এলাকায় গিয়ে জলাবদ্ধ অবস্থা দেখা যায়নি। তবে প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার সড়কগুলো থেকে পানি নেমে যাওয়ার পরও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা এবং কাদাপানি রয়ে গেছে।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসব সড়ক ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান। তিনি বলেন, ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে পানি দিয়ে সড়কগুলো পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। নগরের পানির নিচে চলে যাওয়া সব এলাকাগুলোকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে সুরমা নদীর পানি দুটি পয়েন্টেই বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টে আজ সকাল নয়টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।