আবার ছুটে যাব নারিকেল জিঞ্জিরায়

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নারকেলগাছ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নারকেলগাছ

বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতির এক অনন্য আশীর্বাদ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। যেখানে আকাশ আর সমুদ্র একই রঙে রাঙানো। সারি সারি নারকেলগাছ। আরও আছে কেয়াগাছের ঝোপ। সাগরের নীল আর গাছের সবুজে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা দ্বীপটি।

বাহারি শামুক আর সাগরে ভাসমান নৌকা

নারিকেল জিঞ্জিরা–খ্যাত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। অনেক দিন থেকেই পরিকল্পনা দ্বীপটিতে ঘুরতে যাওয়ার। এবার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করেই বন্ধুরা মিলে স্বপ্নের দ্বীপ ভ্রমণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলো।

পশ্চিম আকাশে সূর্যাস্ত

সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় রাজধানীর আরামবাগ থেকে গাড়িতে রওনা হলাম আমরা ১১ জন বন্ধু। কক্সবাজারের টেকনাফ পৌঁছালাম পরের দিন সকাল সাতটায়। এরপর সেখান থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় জাহাজে করে যাচ্ছি সেন্ট মার্টিন। শুনেছি, সেখানে সবকিছুর দাম বেশি। তাই টেকনাফ থেকে হালকা খাবার, পানি ও ফুটবল নেওয়া হয়েছে সঙ্গে।

এসব প্রবাল পাথরে আঁচড়ে পড়ে ঢেউ

নাফ নদীর বুকের ওপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জাহাজ। একদিকে টেকনাফের বিশাল পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য, অপরদিকে মিয়ানমার সীমান্ত। জাহাজ যখন বিশাল সমুদ্রে উত্তাল ঢেউয়ে দুলুনি খাচ্ছিল, তখন ভয়ও করছিল, আবার ভীষণ আনন্দও হচ্ছিল।

সূর্যাস্তের আগমুহূর্ত

গাঙচিল, সমুদ্রের নীল আর চারদিকে সৌন্দর্য উপভোগের মধ্য দিয়ে আমরা চলে গেলাম সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে। জাহাজ থেকে নেমেই শুরু হলো সমুদ্রসৈকতের দিকে হাঁটা। মাথার ওপর কাঠফাটা রোদ থাকা সত্ত্বেও আনন্দে এতটুকু ভাটা পড়েনি।

আকাশ আর সমুদ্র যেন একই রঙে রাঙানো

আমরা রিসোর্ট খুঁজছিলাম। গুগল ম্যাপ দেখে একটি রিসোর্টের তথ্য নিয়ে সেখানে গেলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন সেই রিসোর্ট ফাঁকা পেয়ে সেখানে উঠে গেলাম সবাই। রিসোর্টের কক্ষ থেকে শোনা যায় সাগরের গর্জন। সাজানো গোছানো রিসোর্টের সঙ্গে সমুদ্রের আবহ আমাদের মনকে আরও বেশি পুলকিত করে। সারা দিনের ক্লান্তি যেন মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল।

সমুদ্রের স্বচ্ছ পানি

দুপুরের খাবার শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা ১১ জন বের হয়ে গেলাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ৪০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া করা সাইকেল চালানো হলো সৈকতে। বিকেল পেরিয়ে এল সন্ধ্যা। চোখের সামনে পশ্চিম আকাশের রাঙা আভার সঙ্গে সূর্যটি যেন তলিয়ে গেল বিশাল সাগরে। আমাদের চোখে-মুখে শুধু বিস্ময় আর মুগ্ধতা। প্রকৃতির রহস্য আর সৌন্দর্য কত যে নির্মোহ হতে পারে, এখানে না এলে হয়তো বোঝাই যেত না।

সমুদ্রসৈকতে ফুটবল খেলা

সব বন্ধু রাতে সমুদ্রপাড়ে হাঁটছিলাম। সেটা ছিল পূর্ণিমা রাত। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর সঙ্গে সমুদ্রের গর্জন। এরই মধ্যে শুরু হলো আমাদের ফুটবল খেলা। একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে রিসোর্টে ফিরলাম আমরা। ক্লান্ত শরীর, ঘুম এল সহজেই। ভোরে উঠলাম সূর্যোদয় দেখব বলে।

নৌকায় করে রওনা হলাম ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশে। প্রকৃতি কতটা সুন্দর হতে পারে তা নিজ চোখে না দেখলে কাউকে বর্ণনা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। যেদিকে চোখ যায় শুধু সাগরের নীল পানি। সেই পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, পানির নিচের প্রবাল পাথরগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। ছেঁড়া দ্বীপে ঘুরেফিরে রিসোর্টে এসে দুপুরের খাবার খাওয়া হলো।

সৈকতে নোঙর করা একটি নৌকা। পাশে ভাসমান আরও কিছু নৌকা।

বিকেল থেকে বিচে বসে আড্ডা চলতে থাকল। আড্ডা আর ঘোরাঘুরি শেষে রাতে ঘরে ফেরা হলো। চোখের পলকে আমাদের সুন্দর মুহূর্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরের দিন বেলা সাড়ে তিনটায় জাহাজে করে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হলাম। স্মৃতির আখরে বন্দী হয়ে থাকল অসংখ্য স্মৃতি, দারুণ সব মুহূর্ত। অস্পষ্ট সুরে মন বলছিল—সুযোগ হলে আবার ছুটে যাব, প্রকৃতির অনন্য লীলাভূমি নারিকেল জিঞ্জিরায়।

লেখা: জামিল হোসেন, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়