নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করে আজ শনিবার আরও ১১৪ জন একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করে গত তিন দিনে মোট ২৪২ জন প্রার্থিতা ফিরে পেলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাছাইয়ে সারা দেশে ৩ হাজার ৬৫ জনের মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তবে সবাই ইসিতে আপিল করেননি। আপিল করেন ৫৪৩ জন। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর বিএনপির প্রার্থীদের মধ্য ১৪১টি আপিল হয়। আপিল করে বিএনপির ৭০ জন নেতা প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এখন ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকছে।
আপিল শুনানির প্রথম দিনে ৮০ জন, দ্বিতীয় দিনে ৭৮ জন এবং তৃতীয় দিনে ৮৪ জন (প্রথম আলোর হিসাবে) প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
শনিবার আপিল শুনানির শেষ দিনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন বড় নেতার আপিল নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে খালেদা জিয়া, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন আপিলেও অবৈধ বিবেচিত হওয়ায় তাঁরা প্রার্থিতা ফিরে পাননি।
তবে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী মোরশেদ খান, আফরোজা আব্বাস ও নাদিম মোস্তফা, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা প্রমুখ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী আপিল শুনানি নেন। অনেক প্রার্থী নিজে, কেউবা আইনজীবীর মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নেন।
যাঁদের মনোনয়ন বৈধ হলো
তথ্য গোপন করার অভিযোগে ঢাকা-৮ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। শুনানি শেষে ইসি মেননের আপিল নামঞ্জুর করেন। ফলে মির্জা আব্বাসের মনোনয়ন বৈধ থাকে।
বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফিরে পেয়েছেন শওকত আজিজ (ঢাকা-১৭), জেড খান মো. রিয়াজউদ্দিন (চাঁদপুর-৪), মামাচিং (বান্দরবান), মোরশেদ খান (চট্টগ্রাম-৮), আবু বকর সিদ্দীক (রাজশাহী-৫), আবু সাহিদ চাঁদ (রাজশাহী-৬), ফকির মাহবুব আনাম স্বপন (টাঙ্গাইল-১), মো. কফিল উদ্দিন (ঢাকা-১৯), কাজী নাজমুল হোসেন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫), এ আহম্মেদ বাকের বিল্লাহ (নীলফামারী-১) ও মো. নাদিম মোস্তফা (রাজশাহী-৫)।
মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন নুতন কুমার চাকমা (খাগড়াছড়ি), আলেয়া বেগম (জয়পুরহাট-১), আলী আলম (সিরাজগঞ্জ-৫), মো. আবদুল ওয়াহেদ (নীলফামারী-৩) ও মেরাজউদ্দিন মোল্লা (রাজশাহী-৩)।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বাদে অন্যান্য দলের যাঁরা প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, তাঁরা হলেন নঈম জাহাঙ্গীর (জামালপুর-৩), আবদুল কাইয়ুম খান (নেত্রকোনা-১), চৌধুরী মুহাম্মদ ইসহাক (ময়মনসিংহ-৬), শাহ মফিজ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), মো, মোরশেদ সিদ্দিকী (চট্টগ্রাম-৯), লুৎফর রহমান (ময়মনসিংহ-১), মহিউদ্দিন মোল্লা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), মো. নাসির উদ্দিন (চট্টগ্রাম-৫), মাসুদুল আলম (চট্টগ্রাম-৫), সেয়দ মাহমুদুল হক (বাহ্মণবাড়িয়া-৩), ইবাদুল খালাসী (রাজশাহী-১), তছির উদ্দিন (কুষ্টিয়া-৪), আবু তালেব (ঝিনাইদহ-২), মো. সাজেদুর রহমান (যশোর-১), লিটন মোল্লাহ (যশোর-৪), রবিউল ইসলাম (যশোর-৫), মেরিনা আক্তার (চুয়াডাঙ্গা-১), এ কে এম জাবির (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), নারায়ণ রক্ষিত (চট্টগ্রাম-১৩), মো. আকবর আমিন (কুমিল্লা-৩), মো. আলী জিন্নাহ (যশোর-৪), মো. নিজামুদ্দীন (যশোর-৫), সৈয়দ বিপ্লব আজাদ (যশোর-৩), এম আসাদুজ্জামান (যশোর-২), মো. ফিরোজ শাহ (যশোর-২), আনসারুল হক (হবিগঞ্জ-৪), আনোয়ার উদ্দিন (সিলেট-১), নুরুল আমিন (সিলেট-৫), মো. বেলাল হোসেন (রংপুর-৪) প্রমুখ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর। গত ২৯ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এরপর ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। এদিন নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জমা দেওয়া ৩ হাজার ৬৫ মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৭৮৬টি বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা, যাঁদের মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের শক্তিধর প্রার্থীও ছিলেন। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে ২৯৫ আসনে জমা পড়েছে ৬৯৬টি মনোনয়নপত্র। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ২৬৪ আসনে জমা দিয়েছে ২৮১টি মনোনয়নপত্র।