সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে প্রভা অরোরা। গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল গ্লোবাল লঞ্চ ইভেন্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক মূল্যবোধে বলীয়ান কিশোর-কিশোরী ও তরুণ- তরুণীদের সমৃদ্ধ ভুবন তৈরি করা।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান প্রভা অরোরার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
প্রভা অরোরার উপদেষ্টা এবং পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন আফতাব উদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য এবং শেষে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন প্রভা অরোরার প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিধান চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, ‘আজ কোভিড -১৯ মহামারির অন্ধকার পটভূমি, জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক পরিণতি, সামাজিক মূল্যবোধের ক্রমবর্ধমান ক্ষয় এবং কিশোর, তরুণদের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলার প্রতি অসম্মান-এমন একটি অবস্থায় আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করছি। আমাদের এটি একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। আমরা বিশ্বাস করি, মাতৃসম প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে এবং এইভাবে কেবল নিজেদেরই নয়, বিশ্বকেও রক্ষা করতে হবে। আমি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি এবং আশা করি যে, একসঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করলে আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’
প্রধান অতিথি তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘প্রভা অরোরা যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন যা বিশ্বকে প্রভাবিত করছে।
বিশেষত আমাদের মতো গরিব ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। এ ক্ষেত্রে প্রভা অরোরার এ ধরনের উদ্যোগ আমার কাছে সাহসী ও মহৎ বলেই মনে হয়েছে।’ তিনি প্রভা অরোরার সাফল্য কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এটা জেনে খুবই খুশি হয়েছি যে, প্রভা অরোরা এ দেশের কিশোর কিশোরী ও তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করছে। যাদের জন্য আমরাও কাজ করছি। আমাদের সরকারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশের তরুণ, নারী ও গ্রামীণ জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমরা অর্থ, জ্ঞান এবং নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রভা অরোরাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য মানবাধিকারকর্মী ইয়ান মার্টিন প্রভা অরোরা যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে তা দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য কামনা করেন ।
ডেনমার্ক থেকে অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরিবেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন ফর এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন (ফিইই)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিয়েল শ্যাফার। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, FEE হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশ শিক্ষা সংগঠন যাদের বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে সদস্য সংগঠন রয়েছে। বিশেষ করে FEE ইউনেসকো দ্বারা বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন শিক্ষার অন্যতম অংশীদার হিসেবে স্বীকৃত।
থাইল্যান্ড থেকে যুক্ত হয়েছিলেন স্বনামধন্য প্রশিক্ষক এবং সাসটেইনেবিলিটি এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক রবার্ট স্টিল। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রভা অরোরা বাংলাদেশি যুবকদের বিশ্বব্যাপী যুব নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং সেতু তৈরির জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে যাচ্ছে।
স্বনামধন্য লেখক এবং গবেষক গোলাম মুরশিদ যুক্ত হয়েছিলেন লন্ডন থেকে। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেন।
স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে কস্ট বেনিফিট অ্যানালাইসিস এবং পরিবেশগত ক্ষতির যে কস্ট ডিসকাউন্টিং পদ্ধতি সেটি ভুল এবং আমাদের এটি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। যেহেতু আমরা পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রভাবিত করছি।’
বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অধ্যাপক আতিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে প্রাকৃতিক অবকাঠামো সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ইমেরিটাস অধ্যাপক ও স্বনামধন্য কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল তাঁর বক্তব্যে প্রভা অরোরাকে মানব সম্পদে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করেন।
থাইল্যান্ড থেকে যুক্ত হয়েছিলেন উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এর ভিজিটিং প্রফেসর ফাইজ শাহ। তিনি বলেন, নেতিবাচক গল্পের পরিবর্তে ইতিবাচক আশা এবং সুযোগ দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের অনুপ্রাণিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এবং স্বনামধন্য দূরদর্শন ব্যক্তিত্ব পঙ্কজ সাহা অংশ নিয়েছিলেন ভারত থেকে। তিনি নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন এবং পরিবেশ সচেতন তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে প্রভা অরোরাকে অনুপ্রাণিত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, ঢাকা শহরে সব অভিবাসীদের এক পঞ্চমাংশের অভিবাসনের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনই প্রধান কারণ। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন এবং প্রভা অরোরা এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে ওয়াটার এইডের আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম, অধ্যাপক ও স্বনামধন্য অনুবাদক ফকরুল আলম, ভারত থেকে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এডুকেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাধবী জোশি, ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল, অস্ট্রিয়া থেকে পরিবেশকর্মী অ্যামিনে অ্যাডেলনিয়া, মালয়েশিয়া থেকে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিউল্লাহ, ফিলিপাইন থেকে পরিবেশ সুরক্ষা কর্মী ল্যাইডেন পেড্রিনা, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম নাহিল ইমামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।