শাহ আলী থানার মামলায় গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্যকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন মিয়া আজ শনিবার প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চার আসামি হলেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার ফজলুল করিম চৌধুরীর ছেলে আরিফুল করিম চৌধুরী (৩৮), নোয়াখালীর কবিরহাটের চরগুল্লাখালী গ্রামের মোস্তফার ছেলে মেহেদী হাসান (২০), চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের প্রয়ালজোশ গ্রামের শাহ আকবরের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন (১৮) ও মাগুরার মির্জাপুর গ্রামের নাঈম মোল্লার ছেলে নাজমুল হাসান (২৯)। তাঁদের মধ্যে প্রধান আসামি আরিফুল করিম চৌধুরীর নামে আগেও মামলা ছিল।
গত বুধবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শাহ আলী থানা এলাকার ডিএনসিসি কমিউনিটি সেন্টারের পশ্চিম পাশের ব্লক-ই-এর ৪ নম্বর সড়কের মোড় থেকে এই চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। পরে এই চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন র্যাব-৪-এর উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা।
আদালত সূত্র বলছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চারজনকে গতকাল শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত প্রত্যেক আসামিকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
মামলার এজাহারে র্যাবের কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, তাঁরা গোপন সূত্রে জানতে পারেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা শাহ আলীর এক চায়ের দোকানের সামনে একত্র হয়েছেন। তখন সেখানে অভিযান চালিয়ে এই চারজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে আরও আট থেকে দশজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, যাঁরা ইসলামকে নিয়ে উপহাস করেন, ইসলামের বিধিবিধান অবমাননা করে বইপুস্তক প্রকাশ করেন, তাঁদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা ইন্টারনেটে যোগাযোগ রাখেন। কখনো কখনো তাঁরা হিজরত করেন। প্রকাশক ও লেখক যাঁরা ইসলামকে নিয়ে কটূক্তি করেন এবং বইপুস্তক প্রকাশ করেন, তাঁদের কঠোর শাস্তি দেওয়াই এই আসামিদের প্রধান লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য টার্গেট কিলিং করার জন্য সেদিন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা একত্রে মিলিত হন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলী থানার এসআই মতিউর রহমান ঢাকার আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, আসামিরা স্বীকার করেন যে, তাঁরা বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা করেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, আসামি আরিফুল করিম চৌধুরীর কাছ থেকে জব্দ করা ব্যাগের ভেতর উগ্রপন্থী বইপুস্তক পাওয়া গেছে। ফেসবুকে আদনান ও আলিফের মধ্যে কথোপকথনের ৮৩ পৃষ্ঠা জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪০টি লিফলেট জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আবদুল্লাহ আল মামুনের ব্যাগের ভেতর থেকে উগ্রপন্থী জঙ্গি বই জব্দ করা হয়েছে। মামুনের ফেসবুক এবং তাঁর মেসেঞ্জারের কথোপকথনের ১৪১ পৃষ্ঠা জব্দ করা হয়েছে। মামলার ১ নম্বর আসামি আরিফুল জানান, তিনি অনলাইনে ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ ও আদনান চৌধুরীর ছদ্মনাম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। আগে তিনি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য ছিলেন।
শাহ আলী থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, চারজন আসামির মধ্যে দুজন ছাত্র বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। ১ নম্বর আসামি আরিফুল কয়েক বছর আগে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।