মক্কা থেকে

আজ পবিত্র হজ

আজ পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা, ওয়ান্‌নি’মাতা লাকা ওয়াল্‌মুল্‌ক্‌, লা শারিকা লাকা’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)—এই ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান।

তালবিয়া পাঠ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজি) আজ রোববার মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করবেন।

পবিত্র হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ পুরুষ ও নারীর জন্য হজ ফরজ। এবার যাঁরা হজে এসেছেন তাঁরা সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবেন। হজের দিনে সারাক্ষণ আরাফাতে অবস্থান করা ফরজ। হজের প্রতিটি অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে হাজিরা একই সারিতে সমবেত হন। সবাই আল্লাহর বান্দা ও রাসুলের উম্মত।
জানা গেছে, হজ ভিসা নিয়ে যাঁরা সৌদি আরবে গিয়ে অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে স্বল্প সময়ের জন্য আনা হবে। কারণ, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজের অন্যতম ফরজ।

পবিত্র হজ পালন করতে গত শুক্রবার সারা বিশ্বের অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান মিনায় পৌঁছান। বিশ্বের প্রায় ১৭২টি দেশের প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান আজ মিনা থেকে আরাফাতে যাবেন। বাংলাদেশ থেকে এ বছর এসেছেন ১ লাখের বেশি হাজি। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ।

আরাফাহ ও আরাফাত এই দুটো শব্দই আরবিতে প্রচলিত। দৈর্ঘ্যে দুই মাইল, প্রস্থেও দুই মাইল। এই বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। জাবাল মানে পাহাড়। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই পাহাড়ে একটি উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। পিলারের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ি করা আছে।

 আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর (৭০টি) সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে।

মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া করে) গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণের ফলে এখন প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ তাওয়াফ করতে পারেন।

কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট ) শয়তানকে ২১টি পাথর করবেন। আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।

হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে। হাজিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মিনায় কিছু দূর পরপর রয়েছে হাসপাতাল। রয়েছে মোয়াচ্ছাসা, দমকল বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য। হাজিরা পথ হারিয়ে ফেললে স্বেচ্ছাসেবক, স্কাউট ও হজকর্মীরা তাঁদের নির্দিষ্ট তাঁবু বা গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

সৌদি হজ মন্ত্রণালয় ও মোয়াচ্ছাসা কার্যালয় সূত্র জানায়, মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজিকে বিনা মূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হাজিদের নানা উপহার দিচ্ছে।

পবিত্র হজ পালন করতে এসে এ পর্যন্ত স্বাভাবিক কারণে ৩৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন।

আজ কাবা শরিফে গিলাফ পরানো হবে

আজ কাবা শরিফের গায়ে পরানো হবে নতুন গিলাফ। প্রতিবছর (৯ জিলহজ) হজের দিন হাজিরা সব আরাফাতের ময়দানে থাকেন এবং মসজিদে হারামে মুসল্লির সংখ্যাও থাকে কম। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান।

কাবা শরিফের দরজা ও বাইরের গিলাফ দুটোই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরা বানানো হয়। চারটি টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো পরস্পর সেলাইযুক্ত। কাবার গিলাফের প্রতিটি কাপড়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৬৭০ কেজি রেশম, ১৫০ কেজি সোনা ও রুপার চিকন তার। ৪৭ থান সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় এই গিলাফ, মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গমিটার। প্রতিটি থান ১ মিটার লম্বা, ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া। একটা আরেকটার সঙ্গে সেলাই করা। প্রতিবছর দুটি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি হয়। একটি হাতে তৈরি, বানাতে সময় লাগে আট-নয় মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়। উম্মুল জুদ কারখানায় মদিনায় হুজরায়ে নববির গিলাফও তৈরি করা হয়।