মোদির সফরের সময় সংঘাত

আগাম গোয়েন্দা তথ্য না থাকা নিয়ে প্রশ্ন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষ হয়।
ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বিক্ষোভ ও সহিংসতার বিষয়ে আগাম কোনো গোয়েন্দা তথ্য সরকারের কাছে ছিল কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। গত ২৬ মার্চ সকালে নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় পা রাখার চার ঘণ্টার মধ্যেই বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, এ রকম কিছু ঘটতে পারে এমন কোনো আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিল না। পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে তাদের নিবিড় কোনো অনুসন্ধান ছিল বলে মনে হয় না। সহিংসতার বিষয়ে অন্য সংগঠনের কাছ থেকেও আগাম তথ্য পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তার দিক থেকে বিষয়টি উদ্বেগজনক।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, মনে হচ্ছে গোয়েন্দাদের কিছুটা ব্যর্থতা রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পরই বলা যাবে ঠিক কী ঘটছে বা ব্যর্থতাটা কার?

বিদেশি অতিগুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের সফরের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহ ও ঝুঁকি বিশ্লেষণের কাজ সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ শাখাও (এসবি) করে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে এবং এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহে যে ঘাটতি ছিল, এটি গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে তা স্পষ্ট। ভারতের সরকারপ্রধান বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় এ ধরনের সহিংসতায় সরকার বিব্রত।

অবশ্য এসবির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের (২৬-২৭ মার্চ) আগে-পরে কী ঘটতে পারে, সে-সংক্রান্ত কোনো তথ্য একেবারেই যে ছিল না, তা নয়। হয়তো জেলা পর্যায় থেকে যেভাবে তথ্য আসার কথা সেভাবে আসেনি। এটা ঠিক, জেলা পর্যায়ে এসবির সব কর্মকর্তা সমান দক্ষ নয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নানা কারণে পুলিশ কর্মকর্তাদের পোস্টিংয়ের (পদায়ন) ক্ষেত্রে এসবি আকর্ষণীয় জায়গা নয়। এর মধ্যে যখন কেউ পদোন্নতিবঞ্চিত হতে থাকেন, তখন কাজ করার আগ্রহ কমে যায়। জেলা পর্যায়ে এসবি মূলত পুলিশ সুপারের অধীনে একটি শাখা হিসেবে কাজ করতে হয়। অথচ জেলা পর্যায়ে অন্য প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থার আলাদা ইউনিট রয়েছে।

২৬ থেকে ২৮ মার্চ—এই তিন দিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রথমে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ-সংঘাত এবং দেশজুড়ে হেফাজতে ইসলামের ডাকা হারতালকে ঘিরে সহিংসতায় ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী মারা যাওয়ার পর সংগঠনের কার্যক্রমের ওপর কারও একক নিয়ন্ত্রণে নেই। নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য হেফাজতের নেতাদের ডেকেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু বিশৃঙ্খলা হবে না—নেতারা এমন আশ্বাস দিলেও কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি হেফাজত নেতারা। হেফাজতের সমর্থক কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা আগের মতো সংগঠনের নেতাদের কথা সেভাবে শুনছেন না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় সংঘাত সম্পর্কে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যদি সরকারের কাছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য না থেকে থাকে, তবে অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।