আগামী ৫ বছরে এক লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগ

শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এক বছর মেয়াদি (পাঁচ থেকে ছয় বছর) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে। শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্য কমপক্ষে দুই বছর মেয়াদি (চার থেকে ছয় বছর) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহযোগিতাও দরকার।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা সরকারের প্রতি এই পরামর্শ দেন। জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, আগামী বছর (২০২০) থেকেই দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। আগামী ৫ বছরে এক লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগ হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা: বাস্তবায়ন-অভিজ্ঞতা এবং সম্ভাবনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে গণমাধ্যম সহযোগী ছিল প্রথম আলো।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন বলেন, শিক্ষার বর্তমান মানকে সুদৃঢ় করতে চাইলে বিদ্যমান এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে দুই বছর মেয়াদি করতে হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কার্যপত্রের খসড়া তৈরি করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই নিজেদের মধ্যে সভা ও কর্মশালা করে সেটি চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করবেন। কারণ এ জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার হবে।

গত ১০ বছরে প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে আকরাম-আল হোসেন বলেন, ১০ বছরে এক লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে এখন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত হয়েছে ১: ৩৬। আগামী ৫ বছরে আরও এক লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে, যাতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত ১: ৩০-এ নেমে আসতে পারে।

‘বাংলাদেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা: বাস্তবায়ন-অভিজ্ঞতা এবং সম্ভাবনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টার, গুলশান, ঢাকা। ছবি: প্রথম আলো

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) সোহেল আহমেদ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই সময়েই শিশুর মস্তিষ্কের প্রায় ৯০ শতাংশ বিকাশ ঘটে থাকে।

গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের পরিচালক (শিক্ষা) শফিকুল ইসলাম। তিনি সঞ্চালনার ফাঁকে ফাঁকে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

গোলটেবিলের শুরুতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন ইউনিসেফের শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মোহসীন ও ব্র্যাক শিক্ষা কার্যসূচির প্রধান প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণ।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর পরিচালক আনজীর লিটন বলেন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় যাঁরা পড়াচ্ছেন, তাঁদের আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। শেখানোর সময় উচ্চারণটা যেন সঠিক হয়।

ব্র্যাক ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন। স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টার, গুলশান, ঢাকা। ছবি: প্রথম আলো

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ইরাম মারিয়াম বলেন, প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম হতে হবে খেলাভিত্তিক।

ইউনিসেফের ঢাকা অফিসের শিক্ষাবিষয়ক প্রধান পাওয়ান কুচিতা তাঁর বক্তৃতায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ খন্দকার মো. মনজুরুল আলম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগের প্রধান মুরশীদ আকতার, আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী জেনা হামাদানী, বেসরকারি সংস্থা এডুকোর শিক্ষা বিশেষজ্ঞ গোলাম কিবরিয়া, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রাক-প্রাথমিক) মহিউদ্দিন আহমেদ, আগা খান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রারম্ভিক শিশু বিকাশবিষয়ক সাবেক পরামর্শক মো. গোলাম মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক আহসান হাবীব, সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তা মেহেরুন নাহার, শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশবিষয়ক বিশেষজ্ঞ তারিকুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, ইউনিসেফের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ইকবাল হোসেন, ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচির কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন খন্দকার, ব্র্যাকের শিশুবিষয়ক কর্মসূচির সমন্বয়ক নিশাত ফাতিমা রহমান।