কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম পরীক্ষা ছিল ওই বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন (কুসিক)। সেই কুসিক নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করা ছিল নূরুল হুদা কমিশনের জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তার আগে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি যে অনাস্থা তৈরি করেছিল, তা কাটিয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার চ্যালেঞ্জ ছিল নূরুল হুদা কমিশনের সামনে। কুসিক নির্বাচনে নূরুল হুদা কমিশন সেই চ্যালেঞ্জ অনেকটাই সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিল। সে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কমই প্রশ্ন উঠেছিল।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনেরও প্রথম পরীক্ষা ছিল গতকাল বুধবারের কুসিক নির্বাচন। গতকালের সারাদিনের ভোটে অল্পবিস্তর অভিযোগ থাকলেও গুরুতর কোনো অভিযোগ ছিল না। তাই গতকাল বিকেলে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত পরপর দুই দুবার কুসিকের সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ফলাফলে জয়-পরাজয় যাই হোক তিনি মেনে নেবেন।
তবে পরিস্থিতি শেষ পর্যায়ে এসে আর তেমন ছিল না। গোল বাধে ফলাফল ঘোষণার শেষ পর্যায়ে এসে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হকের চেয়ে ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক কুসিক নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
তবে মনিরুল হকের দাবি, নির্বাচনে তিনি পরাজিত হননি। তাঁর ফল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। নগরবাসী তাঁকে ভোট দিয়েছেন। নগরবাসীর জন্যই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করেছেন, দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তিনি এ ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একই সঙ্গে কুসিক নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় আওয়ামী লীগের কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসি। সেই বাহাউদ্দিনকে নির্বাচনি এলাকা ছাড়েননি। বরং তিনি ইসির চিঠি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ভোট শেষে গতকাল কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলতে চান না। অন্যদিকে ভোট শেষে বাহাউদ্দিনের বাসায় গেছেন বেসরকারিভাবে জয়লাভ করা আরফানুল হক। সেখানেই তিনি জয় উদ্যাপন করেছেন। বিষয়টি কিছুটা হলেও ইঙ্গিত দেয়, বাহাউদ্দিনের কুসিক নির্বাচনে প্রভাব ছিল।
ক্ষমতাসীন দলের এক সংসদ সদস্যের হাত থেকে ভোটকে পুরোপুরি প্রভাব মুক্ত করতে পারেনি কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ফলে জাতীয় নির্বাচনে এই কমিশন কীভাবে ৩০০ সংসদ সদস্যের হাত থেকে ভোটকে প্রভাবমুক্ত রাখবে, সেই প্রশ্ন রয়ে গেল।
কুসিক নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোগান্তি ছিল। গোপন কক্ষে উঁকি দেওয়ার অভিযোগও আছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় দিন শেষে ভোট নিয়ে বড় ধরনের অসন্তোষ ছিল না।