প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে কোনো আইন নেই। এ–সংক্রান্ত আইন হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। আজ শনিবার সকালে খুলনায় অনুষ্ঠিত ইভিএম মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আগ্রহ থাকলেও ইভিএমে ভোট নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে বিএনপির। এর মাধ্যমে সরকার ভোট কারচুপি করবে বলে দাবি করেছে দলটি।
দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন চলছে এখন। আগামী সোমবার অধিবেশন শেষের মধ্য দিয়ে এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব করেছে ইসি। সংসদে আরপিও সংশোধনী পাস হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় ইসি। সে ক্ষেত্রে আগামী দুই দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশনে আরপিও সংশোধনী পাস না হলে অধ্যাদেশ জারি ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। ২০১১ সালের পর কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ইভিএম কেনার জন্য ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করা হয়। নির্বাচনী ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ইভিএম কেনা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় মোট দেড় লাখ ইভিএম কেনা হবে।
সিইসি কে এম নুরুল হুদা ইভিএম মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বলেন, ইভিএম নিয়ে বিতর্ক ছিল, আছে, থাকবে। উন্নত দেশেও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তথ্যের বিভ্রাট হলে তখন বিতর্ক হয়। তারপরও ইভিএমকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ইভিএম দিয়েই এবারের নির্বাচন করা হবে।
ইভিএমের সুবিধা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএম সাশ্রয়ী, এতে নির্বাচনের ৬০ শতাংশ ব্যয় কমে যাবে। এতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই বলে হ্যাকিং করা সম্ভব নয়। যন্ত্রটি এমন যে কেউ যদি চুরি করে নিয়ে যায়, তাহলেও ভোট কারচুপির সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা থাকবে। তাই আগে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। ইভিএমে ভোটারের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ভোট দিতে হয়। পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের কারও সঙ্গে কারও আঙুলের ছাপ মেলে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হেলাল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর ও জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ।
আজও ইভিএমের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ও বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহার করে ইসি পাতানো নির্বাচন করতে চাইছে। জনগণের সব মতামত উপেক্ষা করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে দেশের আটটি অঞ্চলে ইভিএম মেলা করছে ইসি। ভোট কারচুপির জন্য সরকারি হুকুমেই এটা করা হচ্ছে।