আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের প্রতীকসংবলিত কালো টুপি কারাগার থেকেই এক জঙ্গি আদালতে নিয়ে এসেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আদালত প্রাঙ্গণের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
পুলিশ বলছে, জঙ্গি রাকিবুল হাসানই (রিগ্যান) টুপিটি কারাগার থেকে এনেছিলেন। রাকিবুল গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
তবে পুলিশের এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি কারা কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, তদন্ত শেষেই পুরো বিষয় খোলাসা হবে।
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করা হয় গত বুধবার। রায়ের পর আসামি রাকিবুল আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি পরে এজলাস থেকে বের হন।
হোলি আর্টিজানে হামলার পর থেকেই পুলিশ দাবি করে আসছে, জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের কোনো যোগাযোগ ছিল না। অথচ হামলার সোয়া তিন বছর পর এই মামলার রায়ের দিনই আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি পরে জঙ্গি রাকিবুল বেরিয়ে আসেন। আবার এজলাস থেকে বের করার মিনিট দশেক পর যখন প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়, তখন আরেক জঙ্গি রাজীব গান্ধীর (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) মাথায়ও একই ধরনের টুপি দেখা যায়। কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আনা জঙ্গিদের মাথায় এই টুপি কীভাবে এল, তা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আবার কারাগার প্রান্তে কোনো ত্রুটি ছিল কি না, তা তদন্তে তিন সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার প্রাঙ্গণে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তাঁরা দেখেছেন। জঙ্গি রাকিবুল আদালতের হাজতখানা থেকে মাথায় টুপি পরে বের হন। সেই টুপিই পরে এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় তিনি উল্টিয়ে পরেন বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রায় শেষে আবার কারাগারে ঢোকানোর আগে জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাকিবুল বলেছেন, টুপিটি কারাগার থেকে তিনি এনেছিলেন।
হোলি আর্টিজানে হামলা মামলার আট আসামিকে বুধবার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে আনা হয়। কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সেদিন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রত্যেক জঙ্গিকে ‘বডি স্ক্যানিং মেশিন’ দিয়ে এবং হাত দিয়ে তল্লাশি করে কারাফটক পর্যন্ত নেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়া সিসি ক্যামেরার আওতায় হয়েছে। একজন মাথায় সাদা টুপি পরে বের হন, অন্য কারও কাছে কিছু ছিল না।
কালো টুপিটি কারাগার থেকেই এক জঙ্গি নিয়ে এসেছিলেন, পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধানের এই বক্তব্যের বিষয়ে জেলার মাহবুবুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার থেকে ওই জঙ্গি কোনো টুপি নিয়ে যাননি। পুরো বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে কারাগারের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন) কর্নেল আবরার হোসেনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে কর্নেল আবরার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার থেকে টুপিটি গেছে কি না, তা তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
আর কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ নিশ্চয়ই তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে কথা বলছে। টুপিটি যদি কারাগার থেকে বের হয়, তাহলে প্রিজন ভ্যানে তোলার আগে পুলিশও তো জঙ্গিদের তল্লাশি করেছিল। তারা কেন টুপি পেল না—সেই প্রশ্নও থেকে যায়। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। কমিটি কারাগারের কোনো গাফিলতি পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।