অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের জানাজা সম্পন্ন হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের জানাজা সম্পন্ন হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের জানাজা সম্পন্ন

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মাহবুবে আলমের মরদেহ মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

গতকাল রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইন্তেকাল করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের ছেলে সুমন মাহবুব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে চিকিৎসকেরা তাঁর বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজ বেলা ১১টার কিছু আগে মাহবুবে আলমের মরদেহ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখানে জানাজার পর তাঁর মরদেহে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

মাহবুবে আলমের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন

এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ প্রমুখ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

৩ সেপ্টেম্বর রাতে অ্যাটর্নি জেনারেল জ্বর অনুভব করেন। পরদিন সকালে তাঁর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সেদিন তাঁকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ১৮ সেপ্টেম্বর নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাঁকে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুবে আলম ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের ১৫তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানায়, মাহবুবে আলম ১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মৌছামান্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও ১৯৬৯ সালে লোক প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন মাহবুবে আলম। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। ১৯৭৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৮০ সালে আপিল বিভাগে আইন পেশা পরিচালনার অনুমতি পান। ১৯৯৮ সালে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন মাহবুবে আলম। এ ছাড়া তিনি ১৯৭৯ সালে ভারতের নয়াদিল্লির ‘ইনস্টিটিউট অব কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ’ থেকে সাংবিধানিক আইন ও সংসদীয় প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৮ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত রাষ্ট্রের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাহবুবে আলম। এর মধ্যে ১৯৯৩-৯৪ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৫-২০০৬ মেয়াদে তিনি আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।

মাহবুবে আলমের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস

২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে টানা ১২ বছর মাহবুবে আলম অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেই সঙ্গে পদাধিকার বলে তিনি আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মামলায় আইনজীবী হিসেবে যুক্ত থাকা মাহবুবে আলম সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনী মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলাসহ সর্বোচ্চ আদালতে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধ মামলার মতো ঐতিহাসিক অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মামলা সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছেন।