অস্ত্র ও মাদক মামলায় যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে অস্ত্র মামলায় তার ৭ দেহরক্ষীকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে সন্ধ্যা সাতটার দিকে জিকে শামীমসহ ৮ জনকে আদালতে হাজির করে গুলশান থানা-পুলিশ। অস্ত্র ও মাদক মামলায় সাত দিন করে তাদের ১৪ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।
গুলশান থানা-পুলিশ অস্ত্র মামলায় আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ পায়, আসামি জি কে শামীম চিহ্নিত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক এবং জুয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। আর এই আসামির সহযোগীরা উচ্চ বেতনভোগী দুষ্কর্মের সহযোগী। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও মূলত তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে এসব অস্ত্রশস্ত্র বহন এবং প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল গরুর হাট বাজারে চাঁদাবাজি করে আসছিল বলে জানা যায়।
অপরদিকে গুলশান থানার মাদক মামলায় পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, আসামিকে শামীম অস্ত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদক ব্যবসা ও মানি লন্ডারিং করে আসছেন। আসামির কাছ থেকে পাওয়া বিদেশি মদ রাখার বিষয়ে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি কিংবা এই বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি। আসামি স্বজ্ঞানে মদ অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করে নিজের দখলে রেখেছেন মর্মে স্বীকার করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান আদালতকে বলেন, টেন্ডারবাজি হয়েছে। একটা মানুষ কতগুলো সরকারি কাজ করতে পারেন? বাংলাদেশে কি আর কোন ঠিকাদার নেই? আর একজন লোককে পাহারা দেওয়ার জন্য সাতজন দেহরক্ষী লাগে অথচ একজন মন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য এতজন দেহরক্ষী নেই। রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী আজাদ রহমান আদালতকে বলেন, অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রদর্শন করলে সেই অস্ত্র তখন অবৈধ হয়ে যায়। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেছেন, আসামিদের কাছ থেকে যেসব অস্ত্র পাওয়া গেছে তা সবই বৈধ অস্ত্র। প্রত্যেকটি অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। শামীমের অস্ত্রের লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা টেন্ডারবাজি সম্পর্কে শামীমের আইনজীবী আব্দুর রহমান হাওলাদার আদালতকে বলেন, জি কে শামীম সরকারের অনুমোদিত বিশেষ শ্রেণির ঠিকাদার। বর্তমানে র্যাবসহ সরকারি প্রকল্পের ১৮টি কাজ চলমান। র্যাব সদর দপ্তরের ভবন নির্মাণ, সচিবালয় ভবন নির্মাণ, পঙ্গু হাসপাতালের ভবন নির্মাণসহ ১৮টি সরকারি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো হয়েছে দাবি করে শামীমের এই আইনজীবী আদালতকে আরও বলেন, অস্ত্র আইনের একটি ধারায় শামীমসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে সেই ধারায় মামলা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। টেন্ডারবাজি প্রসঙ্গে শামীমের আইনজীবী আদালতকে বলেন, এখন টেন্ডারবাজি করার কোনো সুযোগ নেই।
এখন অনলাইনে ই-টেন্ডার চালু রয়েছে। যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে অনলাইনে টেন্ডার জমা দিতে পারেন। যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিদেশি মদ পাওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে শামীমের আইনজীবী আব্দুর রহমান হাওলাদার আদালতকে বলেন, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জিকে শামীম মদ পান করেন না। এই মামলা একটি মিথ্যা মামলা। হয়রানি করার জন্য এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন জি কে শামীমের আরেক আইনজীবী শওকত ওসমান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার মক্কেল ষড়যন্ত্রের শিকার। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে জিকে শামীমকে অস্ত্র মামলায় পাঁচ দিন এবং মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর জি কে শামীমের ৭ দেহরক্ষীকে অস্ত্র মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আদালতে দেখা যায়, জিকে শামীমসহ তার দেহরক্ষীদের আদালতে আনা হয়। পরে তাদের তোলা হয় আসামির কাঠগড়ায়। আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জিকে শামীম তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলেন তার স্বজনদের সঙ্গেও। শুনানি শেষ হলে আবার তাকে প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে যায় পুলিশ।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনে অভিযান চালিয়ে প্রভাবশালী ঠিকাদার জিকে শামীমকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় তার ৭ দেহরক্ষীকে। এই ঘটনায় বাদী হয়ে গুলশান থানায় জি কে শামীমসহ তার দেহরক্ষীদের নামে মামলা করে।