অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই ট্রেন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেছেন, রেলের ভাড়া বাড়ানোরও কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
আজ সোমবার রেলভবনে লাগেজ ভ্যান ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন রেলমন্ত্রী।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ ওপরের দিকে যাবে না নিচের দিকে নামবে, তা এখনো নিশ্চিত নই। এ জন্য বাসে আসন পূর্ণ করে আগের ভাড়ায় চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আমরা তেমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।’
রেলের ভাড়া বৃদ্ধির আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত রেলের ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতের জন্য গবেষণা চলছে। যখন মানুষের সামর্থ্য বাড়বে, তখন ভাড়া বৃদ্ধি করা যায় কি না, সেটা নিয়ে দেড় বছর আগে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সম্প্রতি কমিটি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এর মানে এই নয় যে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি হচ্ছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে যে প্রশ্নগুলো তোলা হচ্ছে, সেটি কিন্তু সঠিক নয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার জন্য অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চালাতে বলেছেন। মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত মার্চের শেষের দিকে যাত্রীবাহী সব ট্রেনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে ট্রেন চালু হয়। তখন থেকেই অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ট্রেন চলছে। পর্যায়ক্রমে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩৪টি ট্রেন চলবে। ওই দিন সব আন্তনগর ট্রেনের চলাচল শুরু হবে। তবে মেইল, লোকাল, কমিউটার অনেক ট্রেনের যাতায়াত চালুর এখনো ঘোষণা আসেনি। রেলে যাত্রীবাহী ও মালবাহী মিলে ৩৫৫টি ট্রেন চলাচল করে।
৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান কেনার লক্ষ্যে আজ চীনের সিএনটিক-রেলটেকো-জিনসি (যৌথ) কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করেছে রেলওয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রকল্প পরিচালক মো. মিজানুর রহমান এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের উপমহাব্যবস্থাপক ইয়াং বিং।
এ সময় রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কারের পাশাপাশি মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে লাগেজ ভ্যান কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে লাগেজ ভ্যান দিয়ে রাজশাহী থেকে ট্রেনে আম পরিবহন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শাকসবজি ও নিত্যপণ্য পরিবহনে বিশেষ ট্রেন চলেছে। গত ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুও পরিবহন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কৃষকের পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে লাগেজ ভ্যান কেনা হচ্ছে। এতে কৃষক তাঁর পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই চুক্তির অধীনে স্টেনলেস স্টিল বডি, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত, উচ্চগতিসম্পন্ন বগি এবং অটোমেটিক এয়ার ব্রেক সিস্টেম–সংবলিত লাগেজ ভ্যান সংগ্রহ করা হবে। খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য পরিবহন করা যাবে। এসব লাগেজ ভ্যানের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগামী ২০ মাসের মধ্যে তা সরবরাহ করার কথা।
বর্তমানে রেলে যেসব লাগেজ ভ্যান আছে, সেগুলোতে ডাকের চিঠিপত্র, ফলমূল, এমনকি মুরগি, মাস ও শুঁটকিসহ পচনশীল পণ্যও পরিবহন হয়। এসব লাগেজ ভ্যানের ভেরতটা ফাঁকা, কোনো আসন নেই। নতুন লাগেজ ভ্যানগুলোতে অবশ্য রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা থাকবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।