অর্থি কেন কাঁদছিল

দাদার সঙ্গে গরুটি বিক্রি করতে হাটে আসে অর্থি। কিন্তু বিক্রির সময় নিজের প্রিয় গরুটিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। কারণ গরুটি যে অর্থির খেলার সাথি, একসঙ্গে বড় হয়েছে তারা। গত শুক্রবার বগুড়ার ঘোড়াধাপ হাটে। ছবি: লেখক
দাদার সঙ্গে গরুটি বিক্রি করতে হাটে আসে অর্থি। কিন্তু বিক্রির সময় নিজের প্রিয় গরুটিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। কারণ গরুটি যে অর্থির খেলার সাথি, একসঙ্গে বড় হয়েছে তারা। গত শুক্রবার বগুড়ার ঘোড়াধাপ হাটে।  ছবি: লেখক

মেয়েটার নাম অর্থি। বয়স ১২। প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। দাদার সঙ্গে খুব শখ করে গরু বেচতে হাটে এসেছে। দাদা তফাজ্জল মিয়া। অর্থি তার বাবা, মা আর দাদার সঙ্গে থাকে বগুড়ার সদর উপজেলার নামুজা গ্রামে। ক্ষেতলাল সড়ক ধরে তাদের বাড়ি যাওয়া যায়।

নিজের লালন-পালন করা গরু নিয়ে দাদার সঙ্গে অর্থি এসেছে ঘোড়াধাপ হাটে। যে গরুটাকে সে বেচতে এসেছে, এই বাছুরটা তাদের দুধেল গাভির। বাছুরটা তার চোখের সামনে বড় হয়েছে। এই বাছুরকে সে ঘাস খাইয়েছে, মাড় খাইয়েছে। দড়ি ধরে আলে আলে চড়ে সবুজ দূর্বা খাইয়ে বড় করেছে। বালিকা অর্থিও বড় হয়েছে। ওর সঙ্গে সঙ্গে বাছুরটাও।
২৪ জুলাই, শুক্রবার। গরুর ক্রেতা পাওয়া গেল। দাম ঠিক হলো। গরুটাকে নিয়ে যাবে। অর্থির খেলার সাথি যে গরুটা! তার প্রিয় গরুকে অর্থি শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরল। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি।
গরুটাকে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হলো। গরু চলে যাচ্ছে। মেয়েটা আর কথা বলছে না। এবার সে হেঁচকি দিয়ে কাঁদতে শুরু করল। অর্থির দাদা তফাজ্জল বললেন, নিজের গাইয়ের পেটের গরু তো। পাশ থেকে একজন বলল, ‘মাইয়া কান্দে ক্যা?’ দাদা বললেন, ‘বয়স কম মাইয়ার গো। বাছুরের সাথে খেলে বড় হছে সেই গরু আজ বেচে দিনু।’ তাঁর চোখও টলমল করে উঠল।
অর্থির কান্নায় লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল। বয়সী মানুষেরা অর্থিকে বোঝাচ্ছিলেন ত্যাগের মাহাত্ম্য। লোকজন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, প্রিয় জিনিস যে ত্যাগ করতে হয়, এটাই কোরবানির শিক্ষা!
একটা আইসক্রিম কিনে অর্থিকে খেতে দিলে ওটা সে ঢুকিয়ে দিল দাদার পকেটে। দাদার পকেটে আইসক্রিম গলে যাচ্ছে। ছবি তুলে ওদের ছেড়ে চলে এলাম। ছবিতে অর্থির পাশে দেখা যাচ্ছে তার দাদাকে।