১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে মোংলা বন্দর। পদ্মা সেতু চালু হলে এই অঞ্চলে শিল্পকারখানায় বিনিয়োগের পাশাপাশি বন্দরের গতিশীলতা বাড়বে। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইনজামামুল হক।
আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দরের গতিশীলতায় পদ্মা সেতু কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন?
মোহাম্মদ মুসা: পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথে ঢাকার সঙ্গে মোংলা সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব হবে মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ও পায়রা বন্দরের দূরত্ব বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মোংলা দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বহু গুণ বাড়বে।
আমদানি-রপ্তানির চাপ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত মোংলা বন্দর?
মোহাম্মদ মুসা: আমরা মোংলা বন্দরের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছি, যার কাজ প্রায় শেষের দিকে। গেল অর্থবছর মোংলায় ৯৭০টি জাহাজ এসেছে। এই মুহূর্তে আমাদের ১ হাজার ৫০০ জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা আছে। ২০২৫ সাল নাগাদ সেটি দ্বিগুণ করার কাজ চলছে। কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিং সহজ, দ্রুত ও জটমুক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের ৭৫টি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর এখন গিয়ারলেস কনটেইনার জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আরও দুটি নতুন জেটি তৈরি হচ্ছে।
বন্দর গতিশীল হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কেমন পরিবর্তন আশা করছেন?
মোহাম্মদ মুসা: মোংলা বন্দরে একসময় ঠিকমতো জাহাজ আসতে পারত না। প্রতিবছর লোকসান হচ্ছিল। বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগে বন্দর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মোংলায় ইপিজেডসহ এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। বন্দরের আশপাশে ৬টি সিমেন্ট ও ১৪টি এলপিজি কারখানা রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে শিল্পকারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। ভবিষ্যতে মোংলা হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব।
মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নে কী কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
মোহাম্মদ মুসা: মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৬ হাজার কোটি টাকার একটি আপগ্রেডেশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী বছর এর কাজ শুরু হবে। ড্রেজিং, সহকারী জলযান ক্রয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ছয়টি প্রকল্পের কাজ চলছে। বড় জাহাজ আসার জন্য খনন চলছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে।
এই মুহূর্তে মোংলা বন্দরের জন্য চ্যালেঞ্জ কী।
মোহাম্মদ মুসা: মোংলা বন্দরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নাব্যতা। সমুদ্র থেকে ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্দর চ্যানেল। নাব্যতা ঠিক রাখতে ইতিমধ্যে বন্দরের আউটার বার খনন শেষ হয়েছে। ইনার বার (২৩ কিলোমিটার) খনন চলছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। যানবাহনের চাপ সামাল দিতে যত দ্রুত সম্ভব এই পথটাকে ছয় লেনে উন্নীত করতে হবে। বিমানবন্দরের কাজ শেষ করতে হবে। খুলনা-মোংলা রেলপথের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে মোংলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক, নৌ, রেল ও বিমান যোগাযোগ তৈরি হবে।