পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থাকে বদলে দেবে না, বদলে দেবে অর্থনীতিকে। এ সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। কর্মসংস্থান হবে, মানুষের আয় বাড়বে, দারিদ্র্য বিমোচন হবে। এ সেতুই হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের নতুন অর্থনৈতিক করিডর।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ঢাকা থেকে মাওয়া-জাজিরা-ভাঙ্গা-পায়রা-কুয়াকাটা-যশোর-খুলনা-মোংলা পর্যন্ত সুবিস্তৃত একটি ‘ইকোনমিক করিডর’ হিসেবে দেশের অর্থনীতির দ্বিতীয় সর্বোত্তম লাইফলাইনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে মোটেও সময় নেবে না।
শিল্পায়নে দেশীয় ও বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণে ঢাকা-কুমিল্লা-মিরসরাই-চট্টগ্রাম-আনোয়ারা-মাতারবাড়ী-কক্সবাজার-টেকনাফের মতো আরেকটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে এই ইকোনমিক করিডরের এক দশকও লাগবে না। ঢাকামুখী অভিবাসন স্রোত নিরসনেও উল্লিখিত করিডর তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।
দেশে আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু আছে। এর মধ্যে পদ্মার ওপারে শুধু মোংলা ইপিজেড। পদ্মা সেতুকে ঘিরে যশোর ও পটুয়াখালীতে আরও দুটি ইপিজেড করার প্রস্তাব আছে। এতে এ অঞ্চলে রপ্তানিমুখী খাতে আরও বিনিয়োগ হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, মোংলা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও পায়রা বন্দর এলাকায় চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা রয়েছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দুই বছর আগে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর এই দুই জেলায় একটি তাঁতপল্লি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ১২০ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠছে তাঁতপল্লিটি। শরীয়তপুরের জাজিরা ও মাদারীপুরের শিবচরে ৬০ একর করে মোট ১২০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ। ভূমি উন্নয়নের কাজও শেষ। সেখানে ৮ হাজার ৬৪টি তাঁত শেড হবে।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে নদীর এপারে মুন্সিগঞ্জে বিসিকের চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান। সেগুলো হলো প্লাস্টিক শিল্পকারখানা, রাসায়নিক শিল্পকারখানা, মুদ্রণশিল্প ও এপিআই শিল্পপার্ক। সেতুকে ঘিরে বিসিক বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ফরিদপুরে ৫০০ একর জায়গায় শিল্পপার্ক, খুলনায় ৫০০ একর জায়গায় শিল্পপার্ক, নড়াইলে ২০০ একর, মাগুরায় ২০০ একর জায়গায় শিল্পপার্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০০ একর জায়গায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে যাচ্ছে বেজা।
পদ্মা সেতুর কারণে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর ও বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বাড়বে। সেতু চালু হলে এ দুটি বন্দর দিয়ে আসা পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে। ফলে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে। মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে বন্দরে বছরে ১ হাজার ৫০০টি জাহাজ এবং প্রায় ১ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। তবে ব্যবহার হচ্ছে সক্ষমতার অর্ধেক। পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ অনেক বাড়বে। এ কারণে জাহাজের ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ বন্দরে তিন হাজারের মতো জাহাজ ভিড়তে পারবে।