দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার তদন্ত কমিটি করে, কমিটি সরকারকে প্রতিবেদনও দেয়; কিন্তু কোনো প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। কারণ, সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিচার হয় না। এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনায় দায়িত্ব পালনে নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও লঞ্চমালিকদের উদাসীনতা দায়ী।
আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ওই লঞ্চের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নাগরিক কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সামাজিক ও পরিবেশ সংরক্ষণসংশ্লিষ্ট ১৬টি সংগঠন।
প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান নাগরিক তদন্ত কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আশীষ কুমার। তিনি বলেন, ৪ জানুয়ারি বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯ সদস্যের নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে এবং ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে ২৫টি সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদনে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ঢাকা (সদরঘাট) কার্যালয়ের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মাহবুবুর রশীদ ও পরিদর্শক হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন ও পরিদর্শক দীনেশ দাসের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া লঞ্চটির চার মালিক হামজালাল শেখ, শামীম আহম্মেদ, রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসামের বিরুদ্ধেও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। দায়ী করা হয়েছে লঞ্চটির প্রথম শ্রেণির মাস্টার রিয়াজ সিকদার ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার খলিলুর রহমান, প্রথম শ্রেণির ড্রাইভার মাসুম বিল্লাহ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ড্রাইভার আবুল কালামকেও।
লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় প্রতিবেদনে কিছু পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, নতুন ইঞ্জিন পরিবর্তন করে তা লঞ্চের জন্য উপযুক্ত কি না, সেটি যাচাই না করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করার জন্য মালিক দায়ী এবং যে ডকইয়ার্ডে ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে, সেই কর্তৃপক্ষ দায়ী। একটি লঞ্চ তিন মাস বসে থাকার পর রাজধানীর সদরঘাট থেকে যাত্রা করলেও নৌপরিবহন অধিদপ্তর, নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা খোঁজ নেননি। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে। আবার লঞ্চ যাঁরা পরিচালনা করছিলেন, তাঁরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি, অর্থাৎ লঞ্চের মাস্টার, ড্রাইভাররা দায়ী।
প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমন ঘটনা রোধে নাগরিক কমিটির প্রতিবেদনে ২৫টির সুপারিশ করা হয়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুপারিশ হলো, দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, সিসি ক্যামেরা ও প্রশাসনিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা, নৌযান নকশায় অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া, লঞ্চের ইঞ্জিনকক্ষের পাশে খাবার হোটেল, ক্যানটিন, দাহ্য পদার্থ না রাখা, নিয়মিত নিরাপত্তা মহড়া চালানো, চালক–নাবিকদের বাধ্যতামূলকভাবে নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান, নৌ বিমা চালু করা।
এ ছাড়া দুর্ঘটনায় জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান।