লঞ্চ না ছাড়ায় যাত্রীদের মধ্য ক্ষোভ দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাঁরা অনেকটা জোর করে লঞ্চে উঠে পড়েন। গাদাগাদি করে লঞ্চের ডেকগুলোতে অবস্থান নেন। রোববার দুপুরে বরিশাল নৌবন্দরে।
লঞ্চ না ছাড়ায় যাত্রীদের মধ্য ক্ষোভ দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাঁরা অনেকটা জোর করে লঞ্চে উঠে পড়েন। গাদাগাদি করে লঞ্চের ডেকগুলোতে অবস্থান নেন। রোববার দুপুরে বরিশাল নৌবন্দরে।

অপেক্ষায় হাজারো যাত্রী, তিনটি লঞ্চ ছাড়বে রাতে

যাত্রীদের ভোগান্তি ও ক্ষোভের মুখে অবশেষে বরিশাল নৌবন্দর থেকে আজ রোববার রাতে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিনটি লঞ্চ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনা করে তিনজন লঞ্চমালিককে যাত্রী পরিবহনে রাজি করিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বরিশাল নৌবন্দরে বর্তমানে নয়টি লঞ্চ নোঙর করে আছে। এসব লঞ্চের মাস্টার-চালকসহ অধিকাংশ শ্রমিক ছুটিতে। এ কারণে যাত্রী পরিবহনের জন্য লঞ্চমালিকদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। আবার যাত্রীসংখ্যা কম থাকায় তাঁরা লঞ্চ ছাড়তেও রাজি হচ্ছিলেন না। পরে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তাঁরা লঞ্চমালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। লঞ্চ ছাড়ার জন্য অনুরোধ করা হলে দুপুরে দুজন মালিক এতে সম্মতি দেন। লঞ্চ দুটি হচ্ছে অ্যাডভেঞ্চার-৯ ও কুয়াকাটা-২। কিন্তু পরে যাত্রীদের চাপ আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কীর্তনখোলা-২ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রী পরিবহনে সম্মত হয়। লঞ্চ তিনটি ঢাকার উদ্দেশে রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে বরিশাল নৌবন্দর ত্যাগ করবে।

রোববার সকালে বরিশাল নৌবন্দরে অসংখ্য ঢাকাগামী যাত্রী ঘাটে আসেন। পন্টুনে অপেক্ষা করেন লঞ্চের জন্য। কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। ফলে অনেক যাত্রী ফিরে যান বিকল্প পথে ঢাকায় যাওয়ার জন্য। তারপরও কিছু যাত্রী ঘাটে অবস্থান করছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে আরও অনেক যাত্রী ঘাটে আসতে থাকেন। কিন্তু লঞ্চ না ছাড়ায় যাত্রীদের মধ্য ক্ষোভ দেখা দেয়।

একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা অনেকটা জোর করে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে উঠে পড়েন। তাঁরা গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে লঞ্চের ডেকগুলোতে বিছানার চাদর বিছিয়ে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে বন্দরের কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় কিছু যাত্রীকে নামিয়ে পাশে থাকা কুয়াকাটা-২ লঞ্চে তোলেন। বেলা দুইটার মধ্যে দুটি লঞ্চে অন্তত দেড় হাজার যাত্রী উঠে অবস্থান নেন।

বরগুনার দুটি লঞ্চ ভেড়েনি

রোববার সকাল ১০টায় বরগুনা নৌবন্দর থেকে ছেড়ে আসে রাজারহাট-বি, অভিযান-১০ নামের দুটি লঞ্চ। বরিশাল নৌবন্দরে লঞ্চ দুটির থামার কথা ছিল। কিন্তু লঞ্চ দুটি বরিশালে পৌঁছার আগেই যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তিল ধারণের কোনো ঠাঁই না থাকায় লঞ্চ দুটির বরিশালে যাত্রাবিরতি বাতিল করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

রাজারহাট-বি নামের লঞ্চটির যাত্রী গোলাম মোস্তফা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঝালকাঠির আমুয়া পর্যন্ত আসতেই তাঁদের লঞ্চটি যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তিনতলার ছাদেও কোনো জায়গা ছিল না। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না এই লঞ্চে।

তৈরি পোশাক ও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় শনিবার সকাল থেকে বরিশালের মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। তাঁদের বেশির ভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক। যানবাহন না পেয়ে তাঁরা হেঁটে, রিকশা, ভ্যান, তিন চাকার যানবাহন কিংবা পণ্যবাহী ট্রাকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। দিনভর মানুষের এমন দুর্ভোগ লাঘবে শনিবার রাত আটটায় সরকার লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীবাহী লঞ্চ-বাস চলাচলের কথা ছিল। সেই সময়সীমা আরেক দফা বাড়িয়ে কাল সোমবার সকাল পর্যন্ত করা হয়েছে।