জিম্মি উদ্ধারে পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’কে সফল অভিযান হিসেবে উল্লেখ করে সেনা সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই অভিযানে গুলশানের রেস্তোরাঁ থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কমপক্ষে দুজন বাংলাদেশের নাগরিক, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বাকি ১৭ জনই বিদেশি। দুপুরে এক দফা সংবাদ ব্রিফিং এবং রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
আইএসপিআর জানায়, ১৭ বিদেশি নাগরিকের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয়।
সেনা সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বেলা একটার দিকে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামের ওই অভিযানের বর্ণনা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী এ সময় লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘মাননীয় সরকারপ্রধানের সময়োচিত, দৃঢ়, সাহসী সিদ্ধান্ত ও সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য এই অভিযান সফল হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে নিহত ব্যক্তিদের সবাইকে বিদেশি বলা হলেও পরে সন্ধ্যায় আইএসপিআরের পক্ষ থেকে সংশোধনী দেওয়া হয়। আইএসপিআরের পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সবাইকে বিদেশি বলা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে যে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের সবার জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশ শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তাঁর মোবাইল ফোন নম্বর ০১৭৬৯০১২৫২৪। এ সময় বলা হয়, তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরে জানানো হবে।
নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, অভিযানে সাতজন সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয় এবং এক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত ২০ জনের অধিকাংশকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তিনি আরও জানান, অভিযানের মাধ্যমে তিনজন বিদেশিসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশিদের একজন জাপানি ও দুজন শ্রীলঙ্কান।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাঈম আশফাক বলেন, ‘গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারি নামের একটি রেস্তোরাঁয় দুষ্কৃতকারীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভেতরে প্রবেশ করে রেস্তোরাঁর সবাইকে জিম্মি করে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশ কর্ডন করে সন্ত্রাসীদের যথেচ্ছ কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি যে সাহসিকতা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করেছে, তা অনন্য।’
সংবাদ সম্মেলনে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে সরকারপ্রধান আদেশ প্রদান করেন। সেই মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী সময়ে অপারেশনের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে সকাল আটটায় অপারেশনের সব কাজ শেষ করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত পিস্তল, ফোল্ডেড বাঁট একে ২২ রাইফেল, বিস্ফোরিত আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), ওয়াকিটকি সেট ও অনেক ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়ে ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের কেউ হতাহত হননি।
সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর ৪৬ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান, প্যারা কমান্ডার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এম এম ইমরুল হাসান, র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ সমন্বিত অভিযানে অংশ নেওয়া বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।