বিটিআরসির তরঙ্গ নিলাম

অপারেটররা অংশ নিচ্ছে, ফাইভ-জি চালু ছয় মাসে

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ৩১ মার্চ তরঙ্গ নিলাম আয়োজন করেছে। এই নিলামে অংশ নিতে অপারেটরগুলো ইতিমধ্যে টাকা জমা দিয়েছে।

বিটিআরসি অতি উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা বা ফাইভ-জি চালুর লক্ষ্য নিয়ে এই তরঙ্গ নিলাম আয়োজন করেছে। সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র গতকাল বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, নিলামে চারটি অপারেটরই অংশ নেবে। তরঙ্গ কেনার পর ফাইভ-জি চালু করতে তাদের ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে প্রস্তুতির জন্য।

শুধু ফাইভ-জি নয়, ফোর-জি সেবার মান বাড়াতেও কোনো কোনো অপারেটর বাড়তি তরঙ্গ কেনার চিন্তা করছে।

বিটিআরসি ৩ মার্চ নিলামের তারিখসহ বিস্তারিত নির্দেশনা জারি করে। এই নিলামে অংশ নিতে দরপত্র অংশগ্রহণ বাবদ ১০ কোটি টাকা করে ‘আর্নেস্ট মানি’ দেওয়ার কথা ছিল। শেষ সময় ছিল ২৩ মার্চ বুধবার। বিটিআরসি ও অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, অপারেটরগুলো অর্থ জমা দিয়েছে।

দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার হোসেন সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিলামে অংশ নিতে অর্থ জমা দিয়েছি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, গ্রামীণফোন তরঙ্গ নিলামকে স্বাগত জানায় এবং মনে করে, এই নিলাম ফোর-জির অভিজ্ঞতা উন্নত করা এবং ফাইভ-জির প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

বিটিআরসি সূত্র জানায়, এবার ২,৬০০ ব্যান্ডে ১৬০ মেগাহার্টজ ও ২,৩০০ ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে তোলা হতে পারে। এই দুটি ব্যান্ড ফাইভ-জি সেবা দেওয়ার জন্য উপযোগী বলে গণ্য করা হয়। এবারের নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য বা ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

বিটিআরসি সূত্র বলছে, তরঙ্গের ক্রয়মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ নিলামের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে দিতে হবে। আর অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ অর্থ ৯ বছরে সমান কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে।

দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তরঙ্গ নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন জমা দিয়েছি। তবে নিলামে তরঙ্গের যে ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অনেক বেশি। এটি এই পর্যায়ে থাকলে যথেষ্ট পরিমাণ তরঙ্গ আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব না-ও হতে পারে। এতে সেবার মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থেকেই যাবে।’

এর আগে গত বছরই মোবাইল অপারেটরদের কাছে ৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকায় তরঙ্গ বিক্রি করে সরকার। তখন বিক্রি হয়েছিল ২৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। ওই সময় নিলামে অংশ নিয়ে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ১০ দশমিক ৪, রবি আজিয়াটা ৭ দশমিক ৬ ও বাংলালিংক ৯ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে। তবে সরকারি অপারেটর টেলিটক কোনো তরঙ্গ কিনতে পারেনি। সব মিলিয়ে নিলাম শেষে গ্রামীণফোনের তরঙ্গ ৪৭ দশমিক ৪, রবির ৪৪, বাংলালিংকের ৪০ ও টেলিটকের ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজে দাঁড়ায়।

সরকার এ বছরের মধ্যেই ফাইভ-জি সেবা চালু করতে চায়। টেলিটক ইতিমধ্যে গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকায় ফাইভ-জি চালু করেছে।

অপারেটরদের মধ্যে যার গ্রাহকসংখ্যা যত বেশি, তার বেশি তরঙ্গ দরকার হয়। সেবার মান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বড় একটি হাতিয়ার তরঙ্গ। তবে বাংলাদেশে তরঙ্গের দাম অনেক বেশি পড়ে বলে অভিযোগ করে আসছে অপারেটররা।

রবির সাহেদ আলম বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, তরঙ্গ মূল্যবান জাতীয় সম্পদ, তবে বিক্রি না হলে এর কোনো মূল্য নেই।’