খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র অন্তু রায় ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফি পরিশোধ করতে না পেরে’ আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে বামপন্থী আটটি ছাত্রসংগঠন। প্রয়াত অন্ত রায়ের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফি বাতিলসহ বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি বন্ধ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কৌশলপত্র বাতিলের দাবিও জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে ‘প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেন আট সংগঠনের নেতারা। সেখানেই তাঁরা এসব দাবি করেন। নেতাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘স্রেফ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত করার যে নীল নকশা বহুদিন ধরে ইউজিসি করে আসছে, এখন তার পরিণতি দেখা যাচ্ছে।
৪ এপ্রিল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের দিনমজুর দেবব্রত রায়ের ছেলে অন্তু রায়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফি পরিশোধ করতে না পেরে’ তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালে কুয়েটে ভর্তি হন অন্তু। তিনি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার। এতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফি পরিশোধ করতে না পেরে আমাদের চোখের সামনে একজন প্রাণোচ্ছল তরুণ নিজেকে শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নিতে বাধ্য হলো। কুয়েটের উন্নয়ন ফি নিয়ে বহু প্রতিবেদন অন্তুর মৃত্যুর পর আমাদের সামনে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় যে নামে-বেনামে বিভিন্ন ফি আদায় করে, তা কোন কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন হয়, তা কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ওয়াকিবহাল নন।’ এভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয় বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, করোনা মহামারির ফলে দেশে নতুন করে প্রায় দুই কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন অর্থনৈতিক কার্যক্রম করার সুযোগ আরও হ্রাস পেয়েছে। প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ছিল যথাসম্ভব ফি মওকুফ করা। রাষ্ট্রের কাজ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুটি দাবিতে আগামী সোমবার দুপুর ১২টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্র সমাবেশ হবে। দাবিগুলো হলো অন্ত রায়ের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফি বাতিলসহ নামে-বেনামে ফি বৃদ্ধি বন্ধ ও ইউজিসির কৌশলপত্র বাতিল করা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের একাংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মইনুদ্দিন, ছাত্র ফেডারেশনের একাংশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি দীপা মল্লিক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সোহবত সোভন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।