দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতি–সম্পর্কিত কোনো অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য কোনো সংস্থার কাছে চাওয়া তথ্য সরবরাহ না করলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ অনুসারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন বলে মনে করে কমিশন।
আজ বৃহস্পতিবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং ইউএনওডিসির আয়োজনে দুটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা কমিশনের উপপরিচালক থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘তথ্য চেয়ে আপনারা শুধু চিঠি দিয়ে বসে থাকবেন—এটাও হবে না, আপনাদেরও ফরোয়ার্ড ডায়েরি অনুসরণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আপনাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রশিক্ষণ সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, জনগণের অর্থে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই অর্থের সঠিক ব্যবহারের জন্যই কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কী শিখছেন, কীভাবে নিজ কর্মে এর প্রয়োগ ঘটাবেন এবং কত সময়ের তা দৃশ্যমান হবে, তার স্পষ্ট রূপরেখা প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শেষেই প্রকাশ করতে হবে। প্রত্যেককে অন্তত একটি বিষয় নিজ কাজে প্রয়োগের ব্যবস্থা এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল প্রশিক্ষণ শেষে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সচিবের কাছে জমা দিতে হবে। সচিব ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বাস্তবায়নসংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অনেক কিছুই করতে পারি কিন্তু করি না, এটা হতে পারে না। এর শেষ হওয়া উচিত। ডেটা বা তথ্যের সঠিক বিশ্লেষণ হচ্ছে অপরাধীদের অপরাধ চিহ্নিত করার প্রাথমিক সোপান। এ পর্যায়েই প্রাসঙ্গিক ডেটা সংগ্রহ করতে হয় এবং অপ্রাসঙ্গিক ডেটা বাদ দিতে হয়। তদন্তে সাফল্যের জন্য আরেকটি বড় কাজ হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ। হোমওয়ার্কের মাধ্যমে কর্মকৌশল না করে জিজ্ঞাসাবাদ করে অপরাধীদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত তথ্য পাওয়া কঠিন। তাই অবশ্যই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আগেই যথাযথ হোমওয়ার্ক করে প্রশ্নমালা তৈরি করতে হবে এবং নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, কমিশন ইতিমধ্যেই অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে মানিলন্ডারিংয়ের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রয়োজনে আইনি প্রক্রিয়ায় আরও যৌথ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সম্পদসংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডেটা স্প্রেড শিট প্রদর্শন করা সমীচীন। স্প্রেড শিটের মাধ্যমে সব তথ্য পরিমাণগত বিশ্লেষণ করে লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলে অবৈধ সম্পদের সঠিক চিত্র দৃশ্যমান হবে। তদন্তের গুণগত মানোন্নয়নে এসবের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, কমিশন প্রত্যাশা করে, প্রতিটি মামলার নিখুঁত এবং আন্তর্জাতিক মানের তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। সঠিকভাবে তদন্ত ও প্রসিকিউশন হলে কমিশনের মামলায় শতভাগ সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ সময় দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল যুগে বসবাস করছি। তাই অপরাধীদের চেয়ে অধিকতর জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই।’ পরিবর্তিত এ বিশ্বব্যবস্থায় আইনের সর্বোচ্চ নিখুঁত প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) আ ন ম আল ফিরোজ, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. জহির রায়হান, মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও আইসিটি) এ কে এম সোহেল প্রমুখ।