‘সেরা অদম্য সাংবাদিক’ হিসেবে রোজিনা ইসলামের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার বিশিষ্টজনেরা। মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন রোজিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছে, দুর্নীতিবাজ ও সাংবাদিক নিপীড়কদের জন্য এ পুরস্কার কড়া বার্তা।
গতকাল বুধবার এক প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘অদম্য–সাহসী সাংবাদিক হিসেবে রোজিনা ইসলামের পুরস্কারপ্রাপ্তি অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকার অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি আমাদের গর্বিত করেছেন। রাষ্ট্রের নিপীড়নমূলক আচরণ একজন সত্যানুসন্ধানীকে সাময়িক কষ্ট দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু তাঁকে যে সব সময়ের জন্য থামিয়ে দেওয়া যায় না, নতুন করে আমরা সেই প্রত্যয় প্রত্যয়ী হলাম। রোজিনার জন্য আমরাও নিজেদের সাহস অনেকখানি ফিরে পেলাম।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন রোজিনা ইসলামকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছে, সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি হচ্ছে এ পুরস্কার। প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেছেন, মুক্ত গণমাধ্যম ও সাহসী সাংবাদিকতা সমাজে জবাবদিহি নিশ্চিত করে। প্রতিকূলতার মধ্যেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করছেন রোজিনা ইসলাম, যা অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য।
ফারুখ ফয়সল বলেন, রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট জব্দ থাকায় নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি যেতে পারেননি, যা অত্যন্ত লজ্জার। রোজিনার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে এবং পাসপোর্ট, মুঠোফোন ও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডটি ফেরত দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড এ বছরের ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ দিয়েছে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে। তিনি পুরস্কারটি পেয়েছেন ‘সেরা অদম্য সাংবাদিক’ বা মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট শ্রেণিতে। মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য লড়াই করা সাংবাদিকদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। গত বছর একই পুরস্কার পেয়েছিলেন এ বছর শান্তিতে নোবেলজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা।
গত মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের সিটি হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রোজিনা ইসলামের পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তাঁর স্বামী মো. মনিরুল ইসলাম। রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট জব্দ থাকায় তিনি পুরস্কারটি নিতে নেদারল্যান্ডসে যেতে পারেননি। করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম তুলে ধরতে গিয়ে নিগ্রহ, নির্যাতন ও মামলার শিকার হন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে এখনো মামলা চলমান।
‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ায় রোজিনা ইসলামকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। পুরস্কার পাওয়ায় রোজিনাকে আরও অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, লেখক মহিউদ্দিন আহমদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।
সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে রোজিনার এ স্বীকৃতি অনুপ্রেরণা জোগাবে। এ পুরস্কার দুর্নীতিবাজ ও সাংবাদিক নিপীড়কদের জন্য কড়া বার্তা।
অভিনন্দন জানিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, রোজিনা ইসলামের এ অর্জনে ডিআরইউর সদস্যরা গর্ববোধ করছেন। এ অর্জন গোটা সাংবাদিক সমাজের অর্জন।
রোজিনা ইসলামকে অভিনন্দন জানিয়েছে নারী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক জোট কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম, উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, আইআইএমসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সাউথ এশিয়ান উইমেন ইন মিডিয়া, সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যাকশন ও বাংলাদেশ জাতীয় ইউনেসকো ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান, কুমার বিশ্বজিৎ, সংগীত পরিচালক ফোয়াদ নাসের বাবু। বিনোদনজগতের তারকা চিত্রনায়ক শাকিব খান, অরুণা বিশ্বাস, শবনম ফারিয়া, শান্তা ইসলাম, আশনা হাবিব ভাবনা ও শ্রাবন্তী। এ ছাড়া উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর, শরীয়তপুর সাংবাদিক সমিতি ঢাকার সভাপতি মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।
এক প্রতিক্রিয়ায় বিএফইউজে—বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, রোজিনার এ পুরস্কার নির্যাতনকারীদের জন্য একটি বার্তা যে তাঁরা যেটাকে অন্যায় মনে করেন, সারা পৃথিবী সেটাকে অন্যায় মনে করে না। রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যেভাবে আটকে রেখে অপদস্থ করা হয়েছে, জেলে পাঠানো হয়েছে, এটা অন্যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে রোজিনার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৭টি নথি চুরির ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার যে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে, তা প্রমাণ করে যে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলাটি বৈষম্যমূলক।