করোনা সংক্রমণের কারণে এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা। এ জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা সফটওয়্যারকে কাজে লাগানো হতে পারে।
উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় আজ শনিবার এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে আলোচনা করে। অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা যুক্ত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন–অর–রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে সমন্বিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে অনলাইনে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা গুচ্ছ করে এই ভর্তি পরীক্ষা হবে। এ জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের নেতৃত্বে তৈরি করা একটি সফটওয়্যার আজকের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। সেটির প্রশংসা করেছেন অন্যান্য উপাচার্যরা। আশা করা হচ্ছে, এটি ব্যবহার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছোট খাট পরীক্ষা নেওয়া হবে। এরপর সেটি ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাবে। এর আগে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে।
আর ভর্তি পরীক্ষাটি হবে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) ভিত্তিতে।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুনাজ আহমেদ নূর প্রথম আলোকে বলেন, প্রত্যেক জিনিসের ভালো-মন্দ আছে। করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সীমাবদ্ধতা মাথায় নিয়ে এই সফটওয়্যারের ভিত্তিতে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে। এর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সেটিকে আরও যুগোপযোগী করে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। আর এই সফটওয়্যারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব করা হলেও সেদিন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও উপাচার্যরা। সেদিনই বলা হয়েছিল এ বিষয়ে উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে। এখন এই সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ইউজিসি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন এই পরীক্ষা অনলাইনে হবে না কি সশরীরে হবে সেটি আরও আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। তবে অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের তৈরি করা একটি সফটওয়্যার উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক উপাচার্য তাতে ‘কনভিন্স’ হয়েছেন। তবে সরকার ও ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
কবে ভর্তি পরীক্ষা হবে—জানতে চাইলে উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, এটি নির্ভর করছে এইচএসসির মূল্যায়নের ফল কবে প্রকাশ করা হবে তার ওপর। এ বিষয়ে আগামী মাসে আরেকটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষার পরিবর্তে জেএসসি, এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল মূল্যায়ন করা হবে। এই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। সরাসরি পরীক্ষা না হওয়ায় তাঁরা সবাই এবার উত্তীর্ণ হবেন।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেছেন করোনার কারণে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কীভাবে হবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদ (একাডেমিক কাউন্সিল), ডিনস কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শিগগির আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত গুচ্ছ করেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় আগের মতোই পরীক্ষা ছাড়া কেবল এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।