বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ভর্তি ও মূল্যায়নের (পরীক্ষা) সুযোগ পেল। তবে এই সময়ে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির জন্য মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না। বরং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ফি মানবিক বিবেচনায় মওকুফ বা কমাতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আগের মতোই দিতে হবে।
এসব বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন ( ইউজিসি)। এর আগে গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এক সভায় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেখানেই বলা হয়েছিল এই কাজটি কীভাবে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে ইউজিসি। তারই আলোকে আজ বৃহস্পতিবার এই নির্দেশনা জারি করেছে ইউজিসি।
ইউজিসির নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ খুশি থাকবে বলে মনে করেন ইউজিসির একজন সদস্য।
ইউজিসির নির্দেশনায় চলমান সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে দুটি বিকল্প সুযোগ (অপশন) দেওয়া হয়েছে। এর প্রথমটিতে বলা হয়েছে, অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির ওপর অনলাইনে ক্লাস অব্যাহত থাকবে। তবে ল্যাবরেটরি ভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে। এরপর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই সেমিস্টারের পরীক্ষা ও মুল্যায়ন করা হবে।
দ্বিতীয়টিতে অনলাইনে মূল্যায়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয় অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির ওপর অনলাইনে ক্লাস অব্যাহত থাকবে। তত্তীয় কোর্সের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচি সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হলে অনলাইনে পঠিত অংশের উপর অ্যাসাইনন্ট, কেইস স্টাডি, ভাইভা (ভিডিও ডিভাইস চালু অবস্থায়) ভার্চুয়াল প্রেজেন্টশন নিয়ে স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করে মূল্যায়ন করা যাবে। তবে এর সঙ্গে অনলাইনে ক্লাস শুরুর আগে চলমান সেমিস্টারে ক্লাসে উপস্থিতি, পারফরম্যান্স, ক্লাস পরীক্ষা, মিড টার্ম পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে যা মূল্যায়ন করা হয়েছে সেটি মিলিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন হলে আগের সেমিস্টারের ফলাফল বিবেচনায় আনা যেতে পারে। তবে ল্যাবরেটরিভিত্তিক সকল কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস গ্রহণ ও এর ওপর পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর অতিরিক্ত সময় দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।
উপরের যেকোনো একটি সুযোগ গ্রহণ করতে হলে অনলাইনে নেওয়া ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমপক্ষে ৬০ শতাংশ হতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এই শর্ত পূরণ করেছে তাদের এ বিষয়ে ইউজিসিকে ১৭ মের মধ্যে জানাতে হবে। আর যারা অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেনি বা নিকট ভবিষ্যতে শুরুর পরিকল্পনা নেই সেসব বিশ্ববিদ্যালয়কেও তাদের পরিকল্পনা একই সময়ের মধ্যে ইউজিসিকে জানাতে হবে।
আগামী মাস থেকে অনলাইনে ভর্তি:
ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে পরবর্তী সেমিস্টারে আগামী মাস থেকে অনলাইনে নতুন শিক্ষার্থী ভতি কার্যক্রম শুরু করা যাবে। আর চলমান সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষাথীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী সেমিস্টারের কোর্স রেজিস্ট্রেশন ও ক্লাস শুরুর সুযোগ পাবে।
পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস আগামী ১ জুলাই শুরু হবে। করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি বিরাজ থাকলে পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাসও অনলাইনে নেওয়া যাবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের মতো সাধারণ নিয়মে শিক্ষা কাযক্রম পরিচালিত হবে।
উল্লেখ, সরকার থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়াতে পারে। গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
আরও যত নির্দেশনা:
ক্লাস লেকচার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বা অনলাইন পোর্টালে নিয়মিত আপলোড করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লাস লেকচারসহ অন্যান্য বিষয় দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সক্ষমতা নেই তারা প্রয়োজনে ইউজিসির বিডিরেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বা এ টু আইয়ের সহায়তা সক্ষমতা সৃষ্টি করবে।
করোনাকালীন শিক্ষক একং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আগের মতোই পরিশোধ করতে বলেছে ইউজিসি। আর কনোনোকালীন আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সময়ে শিক্ষাথীদের কাছ থেকে ফি আদায়ে মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না। মানবিক আচরণ করতে হবে। আর আর্থিক অস্বচ্ছলে পড়া শিক্ষাথীদের ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় বিদ্যমান সেশন, টিউশনসহ অন্যান্য ফি মওকুফ, কমানো বা ইনস্টলমেন্টে দেওয়ার সুযোগ দিতে বলেছে ইউজিসি।
অর যেকোনো পরীক্ষার ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচ থেকে সাতদিন আগে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
ইউজিসির এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন,অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানান। তবে এই নির্দেশনায় কী আছে তা দেখে এ বিষয়ে মতামত দেব।